কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন অবশ্যই প্রশাসনিক ও প্রায়োগিক হতে হবে

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

একটি দেশের ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা ভীষণ তাত্পর্যপূর্ণ। অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে এর নিবিড় সংযোগ বিদ্যমান এবং অন্যান্য খাত যেমনব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, রফতানি, আমদানির পাশাপাশি অধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতিতে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। যেকোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের প্রভাব এড়াতে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ ব্যাংকের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকারিতা সরাসরি সংস্থাটির স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিষয়টি প্রশাসনিক সমস্যাকে ঘনীভূত করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার আধুনিক ধারণাটি বিকশিত হয়। ১৯২৯-৩৯ সালের মহামন্দার পর আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা লক্ষ্য নির্ধারণ এবং আর্থিক নীতি সম্পাদনের ক্ষমতা দেয়। ১৯৬০ ১৯৭০-এর দশকে মূল্যস্ফীতির জোয়ারের ফলে বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নীতিগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে সফল হয়। তবে সে সময় প্রেসিডেন্ট রিগানের চিফ অব স্টাফ ডোনাল্ড রেগান যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পল ভলকারকে ১৯৮৪ সালের নির্বাচনের আগে নীতিমালার হার না বাড়ানোর পরামর্শ দেন। বিনা বাক্য ব্যয়ে সেদিনের মিটিং থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ভলকার, তবে সে পরামর্শ মোতাবেক নীতি গ্রহণ পরবর্তী সময়ে স্বল্প মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণ হয়। ফলস্বরূপ অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকার কর্তৃক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার ওপর জোর দেয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে। প্রথমটি স্বাধীনতার লক্ষ্য, দ্বিতীয়টি কার্যসম্পাদনে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোয়, বিশেষ করে সরকারের অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তুলনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথেষ্ট পরিমাণ স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। প্রধান লক্ষ্যগুলো, বিশেষ করে মূল্য স্তর (মূল্যস্ফীতি) প্রবৃদ্ধির রক্ষণাবেক্ষণকে সাধারণত প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা- হোক, প্রবৃদ্ধি হার এবং মূল্যস্ফীতির হার আর্থিক স্থিতিশীলতা দ্রুততর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের বিস্তৃত নীতি পরামর্শ দ্বারা নির্ধারিত হয়। আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক (ফেড) সম্ভবত সর্বোচ্চ স্বাধীনতা স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব ইংল্যান্ড রাজস্ব দপ্তরের মন্ত্রীদের দ্বারা প্রভাবিত থাকায় পুরোপুরিভাবে স্বাধীন ছিল না। ইউরো ব্যবহারকারী দেশগুলোর হয়ে সুদের হার পর্যবেক্ষণ করে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত স্বাধীন ছিল। তবে বর্তমানে আমেরিকা সরকার সুদের হার কমানোর জন্য ফেডের ওপর যারপরনাই চাপ প্রয়োগ করছে, যা ফেডকে ঘিরে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের লক্ষণ। ব্যাংক অব জাপান ২০১৩ সালে সরকারের সঙ্গে নীতি সমন্বয় করতে রাজি হয়, পদক্ষেপটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা হ্রাস করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার বিষয়টি বিতর্কযোগ্য, তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যা- হোক না কেন, ব্যাংকের লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নত আর্থিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। তাই ব্যাংককে তার সব কার্যকরী সিদ্ধান্তগত কার্যক্রমে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন