বৃহস্পতিবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে (সিএবি) স্বাক্ষর করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর আগে বিলটি আলোচনা ও পাসের জন্য লোকসভা ও রাজ্যসভায় উত্থাপনের পর থেকে কয়েক দিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয় দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরায়। এদিকে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর বিলটি আইনে পরিণত হওয়ায় গতকাল আসামের গুয়াহাটিতে জড়ো হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। আগের দিন পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ায় গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল এখানে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের কিছু অংশে গতকাল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। খবর এএফপি।
নতুন বিল অনুযায়ী, দেশটির সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোয় প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা সংখ্যালঘু অভিবাসীরা নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। উত্তরা-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘু অভিবাসীরাও একই সুযোগ পাবেন। তবে অভিবাসী মুসলমানরা তা পাবেন না। তাই সিএবিকে অনেক সমালোচক মুসলমানবিরোধী বলে জানিয়েছেন।
সিএবি আইনে পরিণত হওয়ার পর গুয়াহাটিতে নতুন বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। তবে গুয়াহাটিসহ রাজ্যটির বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের সহিংসতার ছাপ এখনো স্পষ্ট। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে দেখা গেছে গাছ, সিমেন্টের খুঁটি, পাথর ও লোহার রেলিং। রাজ্যটির এটিএম বুথগুলো হয়ে পড়েছে অর্থশূন্য। অন্যদিকে পেট্রল স্টেশনগুলোও বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে একই অঞ্চলের মেঘালয় রাজ্যেও মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখেছে স্থানীয় সরকার। রাজ্যটির রাজধানী শিলংয়ের কিছু জায়গায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কারফিউ জারি রয়েছে।
অন্যদিকে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় আগামীকালকের সফর বাতিলের পরিকল্পনা করছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। আবের ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহায়তা করতে কয়েক দিন ধরে আসাম ও ত্রিপুরায় কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। এরা কাঁদানে গ্যাস ও বিক্ষোভকারীদের লাঠিচার্জে অংশ নিচ্ছে।
দেশটির ২০ কোটি মুসলমানকে কোণঠাসা করতে সিএবি পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হলেও স্থানীয়দের ভয় পাওয়ার অন্য কারণও রয়েছে। অভিবাসীরা নাগরিক হলে স্থানীয়দের চাকরি সংকুচিত হবে ও নিজেদের সংস্কৃতি দুর্বল হবে বলেও মনে করেন অনেকে। এ কারণে অনেকেই আইনটির বিরোধিতা করছেন। অন্যদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলের পাঞ্জাব ও দক্ষিণের কেরালার মুখ্যমন্ত্রীরাও আইনটি প্রয়োগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।