স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ ১৭৭৬ সালে প্রকাশ করেন তার বিখ্যাত বই ‘অ্যান এনকোয়ারি ইনটু দ্য নেচার অ্যান্ড কজেস অব দ্য ওয়েলথ অব নেশনস’, সংক্ষেপে ‘দ্য ওয়েলথ অব নেশনস’। অর্থনীতির বাইবেলখ্যাত বইটির প্রথম খণ্ডে তিনি লেখেন, মানুষ যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিলাসী নৈশভোজের গুরুপাক করে, তাতে কসাই, শুঁড়ি বা রুটিওয়ালার বদান্যতার কোনো পরিচয় নেই। এসব শ্রেণীর প্রত্যেকে নিজ নিজ পেশায় শ্রম দেয় আপন স্বার্থে। ভোক্তাদের জন্য এসব করার পেছনে তাদের কোনো জনহিতকর উদ্দেশ্য নেই, যা আছে তা আত্মপ্রেম। তবে মজার ব্যাপার হলো, ভোক্তারা আপন প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে কখনো কথা বলে না। তারা যখনই এসব পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে, কীসে তাদের কল্যাণ হয়, আরেকটু লাভ বা উপকার হয়; তাদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলে ভোক্তারা।
শিল্প বিপ্লবের ঊষালগ্নে বিক্রেতা-ক্রেতার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা নিয়ে এ মন্তব্য করেছিলেন অ্যাডাম স্মিথ। একটা সময় ছিল, যখন মানুষ এভাবেই ভাবত। নিজের চেয়ে অন্যের ভালো-মন্দ নিয়ে মানুষ ভাবত বেশি। এদিকে বাজার অর্থনীতি আজ এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে; যখন বাজারের পরিসর, ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতা, মুনাফা-লোকসানের ধারণায় এসেছে বিশাল পরিবর্তন।
তবে অতি প্রাচীনকাল থেকে শুরু হওয়া চ্যারিটি বা দাতব্য কার্যক্রম দিন দিন বেড়েছে বৈ কমেনি। ভিক্ষার মতো চ্যারিটিও এক বিশাল ব্যবসা। তাই অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিচারে কসাই, শুঁড়ি ও রুটিওয়ালার সঙ্গে দাতব্য তহবিল সংগ্রাহকদের কোনো তফাত নেই। তবে আমাদের ভুললে চলবে না, চ্যারিটি মানবতার সমবয়সী।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশরা প্রতি ১০০ পাউন্ডের ৫৪ পেনি দান করে, যা জার্মানদের চেয়ে তিন গুণ বেশি। তবে মার্কিনদের চেয়ে তিন গুণ কম। প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি মজার তথ্য স্মরণ করা যেতে পারে, ব্রিটিশরা যা দান করে, তা তাদের বিয়ারের খরচের সমান হলেও মাংস বাবদ ব্যয়ের চেয়ে কম। তবে রুটির পেছনে যে পরিমাণ পাউন্ড তারা ব্যয় করে, তাদের দানের পরিমাণ তার প্রায় তিন গুণ বেশি।
পুরনো খ্রিস্ট ধর্মে বার্ষিক আয়ের এক-দশমাংশ শুভকর্মে দানের একটা প্রথা ছিল। চলতি কর ব্যবস্থাকে প্রাচীন ব্যবস্থার নতুন রূপ বলে ধরা হয়। তবে আধুনিক তহবিল সংগ্রাহকদের (অক্সফাম, গিভওয়েল, সেভ দ্য চিলড্রেন) ভগবানের দোহাই দিতে দেখা যায় না, হয়তো তা আর সম্ভব না বা দরকার নেই। প্রসঙ্গত, এখনো বিশ্বের দেশে দেশে ভিক্ষুক কিংবা ধর্মীয় সংস্থাগুলোকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে সাহায্য চাইতে দেখা যায়। এটার সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত আলাদা হলেও অর্থনৈতিক হিসেব