শিক্ষা মান বৃদ্ধিতে সান্ধ্য কোর্স চালু রাখা উচিত: সাখাওয়াত

সান্ধ্য কোর্স বন্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিত: আব্দুল্লাহ আল মামুন
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ডিপার্টমেন্ট কোর্স, ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স ও ইনস্টিটিউটের ছড়াছড়ি। এসব ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষার্থীরা কতটুকু লাভবান হচ্ছেন, এ ব্যাপারে প্রশ্ন থাকলেও একশ্রেণীর শিক্ষকরা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তারা নিয়মিত নগদ সুবিধা পাচ্ছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিণত করেছেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবদুল হামিদ বক্তব্য দেয়ার পর গত বুধবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এ নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক আ-আল মামুন।


তিনি বলেন, ইউজিসি যে নির্দেশনা দিয়েছে, সরকারের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এতদিন এ বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা তৈরি হয়নি। রাষ্ট্রপতি সান্ধ্য কোর্স নিয়ে সমালোচনা করার পর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক (ইউজিসি) যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করা দরকার। তবে শঙ্কা রয়েছে এ নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে কিনা।


সান্ধ্য কোর্স নিয়ে অনেক বছর ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন, তবে কী কারণে এত বছরেও তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়, এই সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক। এখান থেকে তারা বাড়তি আয় করেন। এখানে তাদের স্বার্থ রয়েছে। যে কারণে অনেক আন্দোলন করেও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নষ্ট করে একপ্রকার সার্টিফিকেট বাণিজ্য করছেন। এটা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে আমাদের মনে নতুন আশা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নিজেই যখন এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, সরকারের উচিত হবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আশা করি, এবার অবশ্যই এ সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হবে।


অনেক শিক্ষক দাবি করেছেন, সান্ধ্য কোর্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এটি নিয়মিত কোর্সকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করছে না। এমনকি নিয়ম মেনেই বিভিন্ন বিভাগগুলোয় সান্ধ্য কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,


এটা কোনো নিয়ম মেনে করা হচ্ছে না। ক্ষমতা থাকলে যেকোনো নিয়ম তৈরি করা যায়। আসলেই কি সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীরা গুণগত মান নিয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারছেন, এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। আর পড়াশোনার মানের কথা বলতে গেলে বলতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কোর্সের শিক্ষার্থীদের দিয়ে নোট তৈরি করে সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থীদের সেই নোট দিয়ে পড়ানো হয়।

শিক্ষা মান বৃদ্ধিতে সান্ধ্য কোর্স চালু রাখা উচিত: সাখাওয়াত হোসেন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বন্ধের যে সিদ্ধান্ত ইউজিসি নিয়েছে, তা ভালোভাবে ভেবে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন। সান্ধ্যা কোর্স নিয়ে তিনি বলেন, এ কোর্সে বিএ অনার্স নেই, শুধু মাস্টার্স ও অন্যান্য ডিপ্লোমা কোর্স আছে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট-টাইম বা অন্য যেকোনোভাবে ক্লাস নেন। উদ্দেশ্য কিছু বাড়তি আয় করা। সমালোচকরা শুধু শিক্ষকদের টাকা আয় করাটাই দেখে। এর বাইরের দিকগুলো খতিয়েও দেখে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান সম্পর্কে সবারই জানা। মুষ্টিমেয় কয়েকটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ছাড়া অনেক ইউনিভার্সিটিতে এক ধরনের সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়া হয় খুব ভালো সিজিপিএ দিয়ে। সেটা সবাই জানেন।

এ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গিয়ে কিছুটা মান ধরে রাখার চেষ্টা করেন। শুধু পাবলিক কেন, নতুন অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও ভালো শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে নিজস্ব ফ্যাকাল্টি আছে, তারা কতটা যোগ্য এবং অভিজ্ঞ, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় যেসব ছাত্র-ছাত্রী প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি নেবে, তারা যদি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করতে পারে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাসে আসতে পারে, তাহলে কি তারা বেশি বেনিফিটেড হবে না? তাদের কোয়ালিটি কি বাড়বে না? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একেকটা উঁচু বিল্ডিংয়ের মধ্যে সবকিছু। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা যদি এসে একটা বছর মাস্টার্স করে, তাহলে তারা একটা উন্মুক্ত ক্যাম্পাস পাবে, কিছুদিনের পদচারণাও তাদের জন্য একটা কালচারাল অ্যাচিভমেন্ট হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এমনিতেই প্রাইভেট টিউশনি করান না, যেটা কলেজ-স্কুলের শিক্ষকরা করে থাকেন।


ডাক্তারদের মতো প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন না। অন্যান্য অনেক প্রফেশনের লোকেরাই কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কনসালট্যান্সি করে থাকেন, বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে নানা রকম আয় করেন। আর যারা ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের কথা বাদই দিলাম। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেলায় উল্টো। যারা দেশের সব প্রফেশনাল পিপলদের তৈরি করেন, যারা পুলিশ, ডাক্তার ম্যাজিস্ট্রেট, ইঞ্জিনিয়ার ও অন্য সব পেশাজীবী মানুষকে গ্র্যাজুয়েশন দেন, ব্যুরোক্র্যাটস তৈরি করেন, তাদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সর্বোচ্চ আর্থিক সুবিধা না দিয়ে, তাদের মতামত না নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কথা চিন্তা না করে এবং জনসাধারণের বা অন্যান্য সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্পর্শে আসার সুযোগ না দিয়ে একতরফাভাবে হঠাৎ করেই একটা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়াটা মনে হয় একটা আলোচনার দাবি রাখে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন