সুদহার অপরিবর্তিত রাখল ফেড

বণিক বার্তা ডেস্ক

বছরের শেষ বৈঠকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ। একই সঙ্গে শিগগিরই আর সুদহার বাড়ছে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। অন্যদিকে, ফেড মনে করছে আগামী বছর মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা অনুকূলে এবং বেকারত্বের হার রেকর্ড নিম্নে থাকবে। খবর রয়টার্স।

একটি অস্থির বছরে ফেডের শেষ বৈঠকের দিকে নজর ছিল সবার। কারণ বছরটা মার্কিন অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর ছিল না, যার জন্য বহুলাংশে দায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ। আর মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা ঠেকাতে চলতি বছর তিনবার সুদহার কমিয়েছে ফেড। তবে শেষ বৈঠকে আশাবাদী সুর শোনা গেছে ফেডের কণ্ঠে। ফেড বলছে, তারা সুনিশ্চিত এখন পর্যন্ত তারা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলো কাজ করছে।

সর্বশেষ নীতি বিবৃতি ও নতুন ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফেড চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেন, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও ঝুঁকি সত্ত্বেও আমরা ইতিবাচক যে আগামী বছর মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা ভালো থাকবে।

তিনি বলেন, অর্থনীতিকে সহযোগিতা করতে চলতি বছর বিভিন্ন সময় আমরা মুদ্রানীতি সমন্বয় করেছি। এমন পদক্ষেপ অর্থনীতিকে বেশ সহায়তা করেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে।

ফেডের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের ফলে বেঞ্চমার্ক সুদহার ১ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যেই থাকল। তবে বছরের শুরুতে যে সুদহার ছিল, তার তুলনায় এটি ১ শতাংশীয় পয়েন্টের তিন-চতুর্থাংশ কম।

অন্যদিকে, সর্বশেষ চার বৈঠকে সুদহার নিয়ে ফেডের সব বোর্ড সদস্য একমত হতে পারেননি, তবে শেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্মিলিতভাবেই। বোর্ড সদস্যরা সবাই সুদহার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে, ১৭ ফেড নীতিনির্ধারকের মধ্যে ১৩ জন মনে করছেন, ২০২১ সালের আগে সুদহারে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই। বাকি চারজন মনে করছেন আগামী বছর একবার সুদহার বাড়ানো যেতে পারে। উল্লেখযোগ্য হলো, কোনো নীতিনির্ধারকই বলেননি, আগামী মাসগুলোতে সুদহার কমানোর প্রয়োজন পড়বে।

ফেড মনে করছে, বর্তমানে যে নিম্ন সুদহার রয়েছে, তা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মজুরি বাড়াতে সাহায্য করবে। সুদ অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে দেয়া বিবৃতিতে ফেড কমিটি ইঙ্গিত দিয়েছে, একটি অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মুদ্রানীতিতে কোনো পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন না তারা। তবে তারা অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবেন।

বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, সঠিক সুদহার ঠিক করতে কমিটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন নির্দেশকের দিকে নজর রাখবে।

পাওয়েল জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে নিম্ন বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে সম্পর্কখুব ক্ষীণ। তিনি বলেন, এখন আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই।

সুদহার না কমানোর যে সিদ্ধান্ত ফেড নিয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করবে। ট্রাম্প বরাবরই আরো কম সুদহার চেয়ে এসেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী সুদহার না কমানোয় পাওয়েলের বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর ভাষায় কথা বলেছেন ট্রাম্প। এমনকি পাওয়েলেরসাহস কম বলেও মনে করেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ, প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তারা। এটি পূরণে কর কর্তনসহ বিভিন্ন প্রণোদনা গ্রহণ করেছেন তিনি। কিন্তু ফেড তার প্রত্যাশা অনুযায়ী সুদহার না কমায় প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। তবে মার্কিন অর্থনীতির অবস্থাভালো বলে ফেড যে বক্তব্য দিয়েছে, তাতে তিনি খুশিই হতে পারেন, কেননা সামনের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।

ফেড কমিটি মনে করছে, ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়ে চলতি বছর শেষ হবে। আর পরবর্তী তিন বছর প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশ, ১ দশমিক ৯ শতাংশ ও ১ দশমিক ৮ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন