রাজশাহীর যুদ্ধাপরাধী টিপু সুলতানের ফাঁসির রায়

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাবেক শিবির নেতা মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার আসামির উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে রাজশাহীর বোয়ালিয়ার সাবেক শিবির নেতা মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বুধবার আসামির উপস্থিতিতে এ মামলার রায় ঘোষণা করে।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন প্রমুখ। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এম এইচ তামিম।

মামলায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, আটক, অপহরণ ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে পাঁচজন আগেই মারা গেছেন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৭ সালের ২ মে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে গত বছর ২৭ মার্চ টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। গেল ১৭ অক্টোবর এই মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রেখেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।

১৭৭ পৃষ্ঠার রায়ে আদালত বলেছে, আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা দুটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগেই আসামিকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তাদের অপরাধ বিবেচেনা করে আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে; এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।’

অন্যদিকে আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম বলেন, “এই রায়ে আমার মক্কেল সংক্ষুব্ধ। আশা করি তিনি আপিল করবেন। আপিল করলে খালাস পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডিত আসামি রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পান। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত রায় আসা ৪১টি মামলার ১০৩ জন আসামির মধ্যে ছয়জন বিচারাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মোট ৯৫ জনের সাজা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৮ যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে।

মামলার অভিযোগ পত্রের বিবরণ অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে লেখাপড়া করা টিপু সুলতান ১৯৮৪ সালে নাটোরের গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। ২০১১ সালে সেখান থেকেই তিনি অবসরে যান।

১৯৭৪ সালের ১০ আগস্ট টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তিনি ছাড়াও পান। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি বিস্ফোরক আইনের এক মামলায় মতিহার থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেফতার করে। পরে তাকে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৭ সালের ২ মে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু বরে। তদন্ত শেষে গতবছর ২৭ মার্চ ছাত্রশিবিরের এই সাবেক নেতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় প্রসিকিউশনের তদন্ত দল।

২০১৮ সালের ২৯ মে প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে ওই বছরেরই ৮ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে টিপু সুলতানের বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

আরও