আফ্রিকার দেশগুলোর ঋণগ্রহণ প্রবণতায় আইএমএফের উদ্বেগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

কমোডিটি পণ্যের উচ্চতর দাম ও বৈশ্বিক নিম্ন সুদহার আফ্রিকার দেশগুলোকে ঋণ নিতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু অর্থনীতিতে শ্লথগতি নেমে আসায় এরই মধ্যে ঋণ পরিশোধে হিমশিম খেতে শুরু করেছে অনেক দেশ। তাই আফ্রিকার দেশগুলোর ঋণ নেয়ার আগ্রহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নব্বইয়ের দশকেও একই ধরনের পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল আফ্রিকার দেশগুলো, যা পরবর্তী সময়ে তাদের তো বটেই, বিশ্বকেই বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। খবর ব্লুমবার্গ।

গত দশকে সাব-সাহারা আফ্রিকার সরকারি ঋণ জিডিপির শতাংশে দ্বিগুণ বেড়েছে। এভাবে ক্রমেই অঞ্চলটি ২০০০ সালের পর্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি বেশ উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। আইএমএফের তথ্যানুসারে, মহাদেশটির ৫৪টি দেশের মধ্যে ২০টি চরম দুর্দশায় রয়েছে বা এর কাছাকাছি আছে। এ দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে।

চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর সরকার ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে। ২০১৮ সালে নিয়েছিল ৩ হাজার কোটি ডলার। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জেরে বিনিয়োগকারীরা মুনাফার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে এবং এরই সুযোগ নিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলো। এদিকে মহাদেশজুড়ে মুদ্রার মানে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তাতে নগদ অর্থে ঋণগ্রহণ অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে; এ কারণে ঋণ পরিশোধ ব্যয়ও বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে অনেক দেশকে অন্যান্য খাতে ব্যয় কমাতে হতে পারে। বিশ্বের মোট দরিদ্র মানুষের অর্ধেকের বেশি বাস করে এ মহাদেশে।

ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের সাসটেইনেবল ফিন্যান্স বিভাগের প্রধান সোনজা গিবস বলেন, মহাদেশটিতে ঋণ পরিশোধ না করতে পারার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, যে কারণেই পরবর্তী সংকট তৈরি হোক না কেন, যখন এটি ঘটবে, তখন আপনি উচ্চমাত্রা সংক্রামক বিপদের দেখা পাবেন, কেননা বিনিয়োগকারীরা উচ্চ মুনাফা প্রদানকারী সম্পদে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

তবে মহাদেশটির সবচেয়ে বড় বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি মনে করে, মহাদেশটি ঋণ সংকট থেকে এখনো বেশ দূরে রয়েছে।

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট একিনউইমি অ্যাদেসিনা এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, বেশকিছু দেশের জিডিপির বিপরীতে ঋণ অনেক বেড়েছে। তবে আফ্রিকার বিপরীতে ঋণ এখনোগ্রহণযোগ্য মাত্রায় রয়েছে।

বাণিজ্যিক বন্ডের প্রতি নির্ভরতা বৃদ্ধি সার্ভিসিং ব্যয় বাড়িয়েছে। অন্যদিকে যে অর্থ নতুন সড়ক বা বিদ্যালয় নির্মাণে ব্যয় করা হতো, তা এখন এ খাতে ব্যয় হচ্ছে। যেমন মহাদেশটির শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ নাইজেরিয়া প্রতি বছর অবকাঠামো খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, প্রায় সমপরিমাণ অর্থ ঋণ পরিশোধেও ব্যয় করে। মহাদেশটির সবচেয়ে শিল্পায়িত অর্থনীতি দক্ষিণ আফ্রিকা ও এ ধরনের দেশগুলোয় ঋণ বাড়ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক জুবিলি ডেট ক্যাম্পেইনের সংগ্রহ করা তথ্যানুসারে, আফ্রিকার দেশগুলোর রাজস্বের গড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে বিদেশী ঋণ পরিশোধে, যা ২০১০ সালে ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

নব্বইয়ের দশকে অতিরিক্ত ব্যয় ও কমোডিটি পণ্যের উচ্চতর দাম আফ্রিকা মহাদেশে ঋণ সংকট তৈরি করেছিল। ওই সংকটের কারণে ২০০৫ সালে বহুজাতিক ঋণদাতা ও ধনী দেশগুলো আফ্রিকার প্রায় কয়েক ডজন দেশের ঋণ মওকুফ করে দিয়েছিল। কিন্তু এবার একই ধরনের সংকট তৈরি হলে ফের ঋণ মওকুফ হয়ে যাওয়া সহজ হবে না। অস্বচ্ছ শর্ত ও বিভিন্ন ঋণদাতার সংমিশ্রণে যে জটিল ঋণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য ঋণ পুনর্বিন্যাস চুক্তি করা যথেষ্ট কঠিন হবে।

ফিচ রেটিংসের সিনিয়র ডিরেক্টর জ্যান ফ্রেডরিচ বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন এজন্য যে, এ সময় ঋণ মওকুফ বা বেইলআউট অনেক বেশি জটিল হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, ধনী দেশের সরকারগুলো মনে করছে, তাদের ঋণ মওকুফ হয়তো প্রকৃতভাবে আফ্রিকার দেশগুলোকে খুব একটা সাহায্য করে না, বরং এটি হয়তো প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের বেইলআউট পেতে সহায়তা করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন