জ্বালানি তেলের বাজার চাঙ্গা করতে
দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ওপেক প্লাস জোট। এ লক্ষ্যে জোটটি জ্বালানি তেলের উত্তোলন
কমিয়ে দিয়ে সরবরাহ সংকট তৈরির চেষ্টা করছে। এমনকি আগামী বছর থেকে উত্তোলন বর্তমান
চুক্তির চেয়ে বেশি কমাতে যাচ্ছে জোটটি। তবে এ জোটের বাইরের দেশগুলো বা নন-ওপেকের উত্তোলন
বৃদ্ধিতে কার্যত ওপেক প্লাস জোটের সে চেষ্টা বৃথা যেতে বসেছে। উপরন্তু আগামী বছর
থেকে নন-ওপেক দেশগুলোর উত্তোলন বৃদ্ধি দাম কমাতে পারে জ্বালানি তেলের, যা
নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে ওপেক জোটকে। খবর হোস্টন ক্রনিক্যাল।
নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি তেলের
বাজারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্টাড এনার্জির প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, ২০২০
সাল থেকে ওপেকবহির্ভূত বা নন-ওপেক দেশগুলোর জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ২২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল
বাড়বে, যা আগামী বছরের জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদার প্রবৃদ্ধির দ্বিগুণ।
১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম রেকর্ড পরিমাণ জ্বালানি তেল উত্তোলন করতে যাচ্ছে নন-ওপেক দেশগুলো।
সে সময় নন-ওপেকের দৈনিক উত্তোলন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেলের মতো বাড়ে।
নন-ওপেকের মধ্যে আগামী বছরে সবচেয়ে বেশি
জ্বালানি তেলের সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি শেল (পাথরের
খনি থেকে উত্তোলিত) অয়েলের ওপর ভর করে জ্বালানি তেলের বাজারে আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম
হচ্ছে, যা আগামী বছর আরো চাঙ্গা হবে। এছাড়া ব্রাজিল, নরওয়ে, কানাডা
ও গায়ানা আগামী বছর জ্বালানি তেলের উত্তোলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াবে। ফলে
পর্যাপ্ত সরবরাহে কমে আসতে পারে জ্বালানি তেলের দাম, যা ওপেক প্লাস জোটের লক্ষ্য অর্জন
বাধাগ্রস্ত করবে।
রিস্টাড এনার্জির প্রাক্কলনে বলা
হয়েছে, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র ১০ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল বেশি উত্তোলন করতে
পারে। উত্তোলন বাড়াবে নরওয়ে ও ব্রাজিলও। দেশ দুটির পাঁচ লাখ ব্যারেল করে অতিরিক্ত
উত্তোলন করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কানাডার শেল অয়েল ও অয়েল স্যান্ডসের দৈনিক
উত্তোলন ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বাড়তে পারে। এর বাইরে উত্তোলন বাড়াবে গায়ানা, অস্ট্রেলিয়া, ইয়েমেন, ভারত, দক্ষিণ
সুদান ও মালয়েশিয়াও।
দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমুখী থাকা জ্বালানি
তেলের বৈশ্বিক বাজার চাঙ্গা করতে উত্তোলন ও সরবরাহ কমিয়ে দেয় ওপেক ও ওপেক-বহির্ভূত
দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস। যার নেতৃত্বে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব ও রাশিয়া। এ জোটের
মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ১২ লাখ ব্যারেল
কমিয়ে আনছে, যা আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত চলবে। তবে উত্তোলন ও সরবরাহ কমিয়ে আনলেও
বাজার চাঙ্গা না হওয়ায় সম্প্রতি জোটের বৈঠক থেকে শীর্ষ দুই উত্তোলক সৌদি আরব ও
রাশিয়া উত্তোলন আরো কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে সেটিও কার্যত আগামী বছরের
জ্বালানি তেলের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে না বলে মনে করছেন
খাতসংশ্লিষ্টরা।
নরওয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, ওপেক
ও রাশিয়ার নেতৃত্বে অন্য দেশগুলোর উত্তোলন বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থার কারণে আগামী
বছরের মাঝামাঝি জ্বালানি তেলের দাম কমে প্রতি ব্যারেল ৪০ ডলারে নেমে আসতে পারে।
রিস্টাড এনার্জির প্রধান এস্পেন
আর্লিংসেনের মতে, আগামী বছর শেল ও অফশোর
(উপকূল থেকে উত্তোলিত জ্বালানি তেল) থেকে
জ্বালানি তেলের উত্তোলনে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হবে। ফলে জ্বালানি তেলের বাজারে
ভারসাম্য আনতে বেশ চাপে পড়বে ওপেক। জ্বালানি পণ্যটির দাম বৃদ্ধি করতে চাইলে আগামী
বছরে ওপেক জোটকে জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরো কমিয়ে আনতে হবে বলেও জানান তিনি।