শুভ্র দ্বীপে নারকীয় তাণ্ডব

বণিক বার্তা ডেস্ক


সক্রিয় আগ্নেয়গিরির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হোয়াইট দ্বীপ, স্থানীয়ভাবে বলে হোয়াকারি। নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট এ আগ্নেগিরিকে বলা হয়, জীবিত ভূতাত্ত্বিক দানব।  পাশাপাশি সামুদ্রিক আগ্নেয়গিরির মধ্যে এটিই সবচেয়ে নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। এ কারণেই এখানে প্রতিবছর প্রায় দশ হাজার পর্যটক আসেন।

মূলত মাওরি  শব্দবন্ধ ‘তে পুইয়া ও হোয়াকারি’ থেকেই স্থানীয় নাম হোয়াকারি এসেছে। এর অর্থ ‘নাটকীয় আগ্নেয়গিরি’। অবশ্য গত সোমবার ‘নারকীয় নাটক’ দেখাল হোয়াকারি। হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাতে কমপক্ষে পাঁচজন পর্যটক নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আরো ৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, ওই দ্বীপে কোনো প্রাণের চিহ্ন আর নেই। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, দ্বীপটিতে চেরনোবিল পরমাণু দুর্ঘটনার মতো বিভীষিকাময় পরিবেশ বিরাজ করছে। অগ্ন্যুৎপাত শুরুর মুহূর্তে হোয়াইট দ্বীপে ৪৭ জন পর্যটক ছিলেন।

নিউজিল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিক দুর্যোগ তথ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট জিওনেটে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সাল থেকেই হোয়াইট হাউজকে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওই সময় পরবর্তী ২৪ বছর টানা কমবেশি অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত ছিল। অগ্ন্যুৎপাতের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ২০১১ সালে। এখনো এ পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে।


দু’জন বিশেষজ্ঞ অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যান লিন্ডসে ও ক্যানটারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরির ভৌত অবকাঠামো বিষয়ের অধ্যাপক বেন কেনেডি হোয়াইট আইল্যান্ডের পটভূমি এবং এর বিস্ফোরণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

অধ্যাপক লিন্ডসে বলেন, আগ্নেয়গিরিটিকে সবসময় সক্রিয় বলা হচ্ছে এ অর্থে যে, এর রয়েছে একটি শক্তিশালী হাইড্রোথার্মাল সিস্টেম। গনগনে লাভাসহ নিয়মিত উদগীরণ থাকতে হবে এমন নয়, এর অর্থ হলো সাময়িক বিরতিতে এ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে এবং এর রয়েছে গ্যাসের হ্রদ।

অধ্যাপক কেনেডি বলেন, হোয়াইট আইল্যান্ডের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন দিক হলো, এ আগ্নেয়গিরি থেকে প্রচুর গ্যাস বের হয়। পাশাপাশি প্রচুর খনিজ থেকে অব্যাহতভাবে ক্রিস্টাল বা স্ফটিক তৈরি হয়।

তবে তিনি সতর্ক করে দেন, এই স্ফটিক তৈরি হওয়ার কারণেই এটির মুখগহ্বরে এসব স্ফটিক জমে গ্যাস উদগীরণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এ দানবের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়তে থাকে। একটা পর্যায়ে গিয়ে ছোটখাট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গলা পরিষ্কার করতে হয় তাকে!

গত আট বছরের মধ্যে এরকম ছয়টি ছোট বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে হোয়াইট আইল্যান্ড। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সে সময় দ্বীপে কোনো পর্যটক ছিল না। ১৯১৪ সালে ভয়াবহ ভূমিধসে এ দ্বীপের ১০ জন খনি শ্রমিক নিহত হয়।

এদিকে সোমবারের ঘটনায় হোয়াইট দ্বীপের পর্যটন শিল্পের সুরক্ষা এবং আগ্নেয়গিরির সতর্কতা ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও অগ্ন্যুৎপাতের সতর্কতা দেয়া ছিল আগে থেকেই। গত নভেম্বরেই সতর্কতা স্তর এক থেকে এক ধাপ বাড়ানো হয়। এর অর্থ আগ্নেয়গিরির ভেতরের অস্থিরতা কিছুটা বেড়েছে। তবে এর মানে কিন্তু ভয়ানক কোনো ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত নয়। এ ধরনের সতর্কতা আগেও দেয়া হয়েছে। এর অর্থ আগ্নেয়গিরির ভেতরে অস্থিরতা চলছে, যে কোনো সময় সামান্য উদগীরণ হতে পারে, আবার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারে।

অধ্যাপক লিন্ডসে বলেন, সোমবারের অগ্ন্যুৎপাতে লাভা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। অবশ্য এটা শনাক্ত করা খুব কঠিন।  তিনি আরো বলেন, ঘটনাটিতে যদি আগ্নেয়গিরির হাইড্রোথার্মাল সিস্টেমের ভূমিকা থাকে তাহলে এক্ষেত্রে এর তলদেশে লাভা জমে যাওয়া বা বড় ধরনের ভূকম্পন হওয়ার কথা নয়। তবে উত্তপ্ত গ্যাস, জলীয় বাষ্প ও শিলা তীব্র বেগে বেরিয়ে আসতে পারে। ২০১৪ সালে জাপানের ওনতাক আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সময় তীব্র বেগে বেরিয়ে আসা শিলার আঘাতেই প্রচুর মানুষ আহত হয়েছিল।

হোয়াইট আইল্যান্ড নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার গভীরে প্লেন্টি উপসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটি ১৯৩৬ সালে অকল্যান্ডের স্টক ব্রোকার জর্জ রেমন্ড বাটল কিনেছিলেন। পরে তিনি সরকারের কাছে দ্বীপটি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালেও ১৯৫২ সালে প্রাকৃতিক পর্যটন এলাকা হিসেবে সংরক্ষণ করতে সম্মত হন। এখন এ দ্বীপ ঘিরে পর্যটন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বাটল ফ্যামিলি ট্রাস্ট।

সাদা মেঘের মতো দেখায় বলে ১৭৬৯ সালে দ্বীপটিকে ‘হোয়াইট আইল্যান্ড’ নাম দেন পরিব্রাজক ক্যাপ্টেন জেমস কুক।

সূত্র: বিবিসি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন