তীব্র বিরোধিতার মুখেও ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাস

বিরোধীরা অসাংবিধানিক বললেও সাত ঘণ্টা বিতর্ক শেষে সোমবার মধ্যরাতে ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাস হয়েছে । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এর ফলে প্রতিবেশী তিন দেশের অ-মুসলিম সংখ্যালঘু শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু এ আইনের সঙ্গে ভারতীয় মুসলিমদের কোনো  সম্পর্ক নেই, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। এখন দ্রুত সারা দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) করা হবে বলেও জানিয়ে দেন এ বিজেপি নেতা। খবর এনডিটিভি।

এ নাগরিকত্ব বিলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ভারতের লোকসভায় প্রায় সবকটি বিরোধী দল। এর মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এনসিপি, সিপিএম, সিপিআই, মুসলিম লিগ, এমআইএম, তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি।

আর বিজেপির সঙ্গে বিলের পক্ষে রয়েছে অকালি, বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, জেডি-ইউ। কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সমর্থন দিয়েছে শিবসেনা। সম্প্রতি তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার গঠন নিয়ে বিজেপির সঙ্গে এ দলটির তিক্ততা বেড়েছে।

সোমবার সংসদে বিলটি উপস্থাপন করতেই সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের অধীররঞ্জন চৌধুরী, শশী তারুর, গৌরব গগৈ, তৃণমূলের সৌগত রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, এমআইএম-এর আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, মুসলিম লিগের পি কে কুনহালিকুট্টিরা তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য রাখেন। অমিত শাহও বারবার দাঁড়িয়ে সেসব আপত্তির জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন।

এ বিল সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ করে নয়, এতে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরি হবে না বলে বারবার দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত অমিত শাহ বলেছেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজন হয়েছে। সেই কারণে এখন ধর্মের ভিত্তিতে সেই বিভাজনের রাজনীতি করতে হচ্ছে তাদের। গোটা বিলের পেছনে মহম্মদ আলি জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনে কংগ্রেসের দেশ ভাগে রাজি হওয়াকেই দায়ী করেছেন তিনি। শাহ বলেন, ‘১৯৫০ সালের নেহরু-লিয়াকত চুক্তি যদি সফল ভাবে বাস্তবায়িত হত, তা হলে ওই বিল আনার প্রয়োজন হত না।’

লোকসভায় সিএবি পাসের পরে সমস্ত বিরোধী দল ও অমিত শাহকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আগামী বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল উপস্থাপন করা হতে পারে।

এদিকে ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সদ্য পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধন বিলকে ‘ভুল পথের বিপজ্জনক মোড়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। বিলটি ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পাস হলে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিও জানিয়েছে কমিশন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন