মনে কত প্রশ্ন জাগে...

মো. আব্দুল হামিদ

গ্রামের অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, এমনকি অতিদরিদ্র পরিবারে বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন অতিথির আগমন ঘটে। সেখানে সন্তান হওয়া বন্ধের চেষ্টা করতে দেখা যায়একেবারে হয় না এমন সংখ্যা হাতেগোনা। কিন্তু শহরে উচ্চশিক্ষিত, উচ্চপদস্থ, ধনাঢ্য পরিবারে সন্তান না হওয়া দম্পতির সংখ্যা অ্যালার্মিং হারে বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা। এখনো ব্যক্তিপর্যায়ে নিয়ে হা-হুতাশ, কানাঘুষা বা চেষ্টা-তদবির চলছে। অস্বস্তির বিষয় হওয়ায় কেউ নিয়ে বাইরে মুখ খুলছে না। সহকর্মী, বন্ধু পরিবারের সদস্যরা আড়ালে-আবডালে আলোচনা করলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দম্পতির সামনে নিয়ে কথা বলে না।

কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেনভালো মানের খাবার খাওয়া, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকা, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসবাস করা, কঠোর শারীরিক পরিশ্রম না করা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতাএত কিছু কেন তাদের সন্তান জন্মদানে সাহায্য করতে পারছে না? অসংখ্য দম্পতির পেশাগত সফলতা, আর্থিক সচ্ছলতা, সামাজিক অবস্থানসবকিছু মাঝেমধ্যেঅর্থহীনমনে হয়যখন প্রসঙ্গটি সামনে আসে। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করার পরও সফলতা না পাওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। বিষয় নিয়ে এখনই সামাজিক রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগী হওয়া জরুরি নয় কি?

ছোটবেলায় দেখতাম গরিব-অশিক্ষিত পরিবারে দিন-রাত ঝগড়া হতো মূলত অভাব-অনটনের কারণে। পেটে ভাত, পরনে কাপড়, মাথায় তেল জুটত না বলেই নাকি ওসব পরিবারের বউরা ঝগড়া করত। অন্যদিকে তরকারিতে লবণ কম বা ঝাল বেশি হলে কিংবা অনুমতি ছাড়া বউ অন্যের বাড়িতে বেড়াতে গেলে স্বামীরা রাগারাগি করত। মাঝেমধ্যে স্বামী একাধিক বিয়ে করার কারণেও সেটা হতো। এখনো বস্তিগুলোয় মোটামুটি এসব কারণে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া দেখা যায়।

কিন্তু নগরজীবনে ভালো আয়-ইনকাম করা, দুজনই ভালো পেশায় থাকা মানুষদের তো সেই সমস্যাগুলো থাকার কথা না। দুজন মানুষই জীবনে সফল হওয়ার জন্য এত পড়ালেখা করেছে, ভালো চাকরি করছে, আর্থিক সামর্থ্য বেড়েছেতার পরও কিসের জন্য তারা দিন-রাত, সকাল-বিকাল ফাইট করছে? বাস্তবে তারা যা যা অর্জন করেছে, তার চেয়েকল্পিত আরো কিছুপাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কি তাদেরক্রেজিকরে তুলছে? মরীচিকা পানি নয়; কিন্তু তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি সেটাকে পানি ভেবে তা অর্জনের পেছনে ছুটতে থাকেএতে অবশিষ্ট শক্তিটুকুও দ্রুত ক্ষয় হয়, মৃত্যু ঘনিয়ে আসে। শহুরে শিক্ষিত, আর্থিকভাবে সচ্ছল দম্পতিরা কি তেমন কিছুর পানেই ছুটছে?

একাডেমিক বইয়ের বাইরে আজকাল কাউকে বই পড়তে দেখি না, -সংক্রান্ত আলোচনাও খুব একটা শুনি না। অথচ পহেলা ফেব্রুয়ারিতে শুধু একুশের গ্রন্থমেলায় (২০১৯) বই বিক্রি হয় ৭০ কোটি টাকার উপরে! রকমারি ডটকমসহ অন্যান্য বই দোকানের মাধ্যমে নিশ্চয় তা শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করেসেগুলো কারা কেনে? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলোকেন কেনে?

শত-সহস্র বছরের অভিজ্ঞতা, ভাবনা দর্শন বইয়ের মলাটে বন্দি থাকেআমরা তার পাতা উল্টালেই আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের মতো কেউ একজন বেরিয়ে আমাদের উপকার করতে উদ্যত হয়। অথচ মাসের পর মাস বইয়ের একটি পাতাও উল্টে দেখার রুচি হয় না। আবার সেই মানুষটাই সারা দিন সন্তানদের বই পড়ার জন্য ঘ্যানর ঘ্যানর করি। বইপড়া যদি সত্যিই এত উপকারীতবে আপনি কেন পড়ছেন নাসন্তানরা সে প্রশ্ন করতেই পারে! তাছাড়া নিজে যে কাজ করেন না, সেই কাজটিই অন্যদের করতে বলার নৈতিক অধিকার থাকে কি?

ছোটবেলা ভাবসম্প্রসারণ শিখতামশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অথচ বয়স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন