বহুকাল আগের কথা। মানবিক শাসন আর ভালোবাসা দিয়ে কৈবর্তরাজ ভীম প্রজাকুলে হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন। রাজা ভীম তার রাজ্য সাজিয়েছিলেন নান্দনিক বৃক্ষরাজিতে। সমাজের সব শ্রেণীপেশার মানুষকে নিয়ে সুন্দর-নির্মোহ একটি স্বপ্নের রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক, হাসি-আনন্দে। কিন্তু একটা সময় গিয়ে ভীমের রাজ্য হয়ে ওঠে অন্য অনেক রাজার কাছে ঈর্ষণীয়। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজা রাম পাল। একদিন তিনি আশপাশের রাজ্যের সহায়তায় ভীমের রাজ্য আক্রমণ করেন এবং পুনর্দখল করে নেন। ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে রাম পাল হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠেন। নৃশংসভাবে হত্যা করেন ভীমকে, তার পরিবারের সদস্য, অনুসারী ও সভাসদকে। এমন নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করে মৃত্যুর আগ মুহূর্তে রাজা ভীম ধিক্কার জানান রাম পালকে। তিনি প্রশ্ন করেন, বৌদ্ধ ধর্মজাত হয়েও কেন এমন নৃশংসতায় মেতে উঠেছেন রাম পাল? রাজা ভীম এও প্রশ্ন তোলেন, যে ধর্ম শান্তির বার্তা শোনায়, সে ধর্মে দীক্ষিত হয়ে একজন শাসক কীভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন? কিন্তু রাম পালের কাছে ধর্ম আর ক্ষমতা এক কাতারে এসে দাঁড়ায়। ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতা চর্চায় মেতে ওঠেন তিনি। এমন কাহিনী ঘিরে যশোরের নাট্যদল ‘যশোর বিবর্তন’ আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে নির্মাণ করেছিল নাটক ‘কৈবর্তগাথা’।
বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসনির্ভর এ নাটক সম্প্রতি নতুন ও সময়োপযোগী করে সাজিয়েছে দলটি। আর নতুন আঙ্গিকের এ নাটকটিই এবার মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে ঢাকার নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর আয়োজিত দুই বাংলার নাট্যমেলায়। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় এটি প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে।
‘কৈবর্তগাথা’র কাহিনী লিখেছেন নাট্যকার আব্দুল্লাহেল মাহমুদ ও নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়েজ জহির। প্রাচীন বাংলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে নতুন করে এ সময় হাজির করার কারণ জানতে চাইলে নাটকটির নির্দেশক ফয়েজ জহির বলেন, ‘কৈবর্তগাথার
কাহিনীর প্রেক্ষাপট এমন এক বিষয় নিয়ে, যা বর্তমানেও বিরাজমান ও সত্য। এখনো মানুষ গুটিকয়েক ক্ষমতালোভীর ছোবলে আক্রান্ত। এখনো রাজনীতির ছোবলে মানবিকতা প্রাণ হারাচ্ছে। এমনকি যারা শিল্প সাহিত্য চর্চা করেন, তাদের মধ্যেও কারো কারো এ জিঘাংসা বিদ্যমান। তারা শাসকদের প্রয়োজন মেটান এবং সুবিধা নেন। তাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে নাটকটি সময়কে এখনো ধারণ করে আছে। এজন্য আমরা নাটকটি আবারো মঞ্চে এনেছি।’
২০০২-০৩ সালের দিক থেকে শুরু করে নাটকটি নিয়মিত মঞ্চায়ন করত যশোর বিবর্তন। যদিও মাঝের অনেকটা সময় ধরে এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর সম্প্রতি আবার নতুন করে সাজানো হয় পুরো নাটকটি। এ নিয়ে নির্দেশকের বক্তব্য, ‘দেড় যুগ আগের সময় আর এখনকার সময় এক নয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই নাট্যরীতি, অভিনয়, আলো থেকে শুরু করে মঞ্চ সবকিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। নাটকটি যেন বর্তমান দর্শকের সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করতে পারে; সেজন্য আমরা গল্পশৈলী, অভিনয় ও মঞ্চরীতিতে পরিবর্তন করেছি। তাছাড়া শরীরেরও ভাষা আছে। আমরা তা ব্যবহারের চেষ্টা করেছি। শরীরী ভাষার