ডিএসইতে আলহাজ টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলহাজ টেক্সটাইল এর পরিচালকদের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে অভিযোগ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের অভিযোগ, কোম্পানিটির রিজার্ভে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও চলতি মূলধন সংকটের কথা বলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ কোম্পানিটির প্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্য দেখে বিনিয়োগ করে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ডিএসইকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে আলহাজ টেক্সটাইলের শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মো. মামুন-উর রশীদ মো. আব্দুল মান্নানের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তারা বিভিন্ন সময়ে ডিএসইর নিউজ আর্কাইভে অগ্রণী ব্যাংক থেকে আলহাজ টেক্সটাইলের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাওয়াসংক্রান্ত মূল্যসংবেদনশীল তথ্যের ভিত্তিতে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের ধারাবাহিক দরপতনে তারা পুঁজি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোম্পানিটির কতিপয় পরিচালকের কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রির বিষয়টি দরপতনকে ত্বরান্বিত করেছে।

কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীর তথ্য উল্লেখ করে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বর্তমানে রিজার্ভ ছাড়াও কোম্পানির কাছে ২২ কোটি টাকার বেশি অর্থ রয়েছে, যা ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে রাখা আছে। আলহাজ টেক্সটাইল অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কোটি টাকা এবং বছরের এপ্রিল ২৫ কোটি টাকা ২০ মে ১১ কোটি টাকা পেয়েছে। অথচ কোম্পানিটি বছরের ২৫ জুন চলতি মূলধন সংকট উৎপাদিত সুতা গুদামে রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণ দেখিয়ে কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে বছরের অক্টোবর স্থায়ীভাবে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। কোম্পানিটির কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন বন্ধের বিষয়টিকে স্ববিরোধী, বাস্তবতাবিবর্জিত অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীরা আরো অভিযোগ করেছেন, কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৮ সালের জুন শেষে উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ। অথচ বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অর্থাৎ গত এক বছরে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১৭ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার বিক্রি কিংবা হস্তান্তর করেছেন, যা সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন। বছরের ১৬ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১২৩ টাকা, যা উৎপাদন বন্ধের খবরে কমতে কমতে ২২ অক্টোবর ২৩ টাকা ২০ পয়সায় নেমে এসেছে। কোম্পানিটি ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নামে-বেনামে থাকা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা করেছেন। এতে সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিটি কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লভ্যাংশ ঘোষণাসংক্রান্ত সভা আহ্বান করেনি। তারা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন কোম্পানিটির গুদামে থাকা সুতা এরই মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে এবং নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরোদমে উৎপাদনে গিয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উৎপাদন শুরুর বিষয়টি এখন পর্যন্ত স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়নি। তাই প্রকৃতপক্ষে আলহাজ টেক্সটাইলের উৎপাদন বন্ধ নাকি চালু রয়েছে বিষয়ে ডিএসইকে তদন্ত করে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন