বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের সমাজ গড়ে উঠুক

ফাহিম মোরশেদ হিমু

বল আমরা পশু নই, বল ভগিনী আমরা আসবাব নই, বল কনে আমরা জড়োয়া অলংকাররূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকবার বস্তু নই, সকলে সমস্বরে বল আমরা মানুষ!’—নারীদের উদ্দেশে বেগম রোকেয়ার আহ্বান।

পুরুষশাসিত আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটা শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হতে থাকে। জন্মের পর পরই লিঙ্গভেদে শিশুটির বেড়ে ওঠার প্রতিটা পদক্ষেপে চাপিয়ে দেয়া হয় সমাজের নানা রকম নিয়ম-কানুন। তার হাতে-পায়ে সুকৌশলে পরিয়ে দেয়া হয় লিঙ্গবৈষম্যের শিকল। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা শিশুটি একদিন হঠাৎ বুঝতে পারে, সে মেয়ে। তার সবকিছু চাইতে নেই, তার সবকিছু করতে নেই।

যে শিশু মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়, সে শিশুটির চাল-চলনে, আচার-আচরণে, হাসি-ঠাট্টায়, চিন্তায় সবখানেই জুড়ে দেয়া হয় নানা নিয়ম। তাকে টিপ পরিয়ে, পুতুল খেলিয়ে প্রমাণ করা হয় সে নারী। ইচ্ছে করলেই সে পুরুষের মতো বেড়ে উঠতে পারবে না। ছেলেশিশুর মতো জোরে কথা বলতে তাকে বারণ করা হয়। তার পোশাক ভিন্ন, খেলনাও ভিন্ন হয়। চার দেয়ালের মাঝেই বন্দি হয়ে যায় তার শৈশব, কৈশোর।

বাঙালি মুসলমান সমাজের এই যে নারী-পুরুষের বৈষম্য, তার বিরুদ্ধে প্রথম যে কণ্ঠটি আওয়াজ তুলেছিল, সেটি বেগম রোকেয়া। তিনি বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী। তিনি বাঙালি মুসলমানদের নবজাগরণের সূচনালগ্নে নারী শিক্ষা নারী জাগরণে নেতৃত্ব দেন। বেগম রোকেয়া নারী-পুরুষের সমকক্ষতার যুক্তি দিয়ে নারীদের অর্থনৈতিক, সামাজিক রাজনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম রোকেয়ার অবদান চিরস্মরণীয়।

আজ ডিসেম্বর সেই সাহিত্যিক, শিক্ষানুরাগী, সমাজ-সংস্কারক বেগম রোকেয়ার জন্ম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৮০ সালের ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না পেলেও বাড়িতে বড় ভাইদের সহায়তায় পড়ালেখার সুযোগ লাভ করেন। শুধু তা- নয়, সাহিত্যচর্চা করার যথেষ্ট উপযুক্ত পরিবেশও বেগম রোকেয়া ছোটবেলা থেকেই পেয়েছিলেন। আর তাই সামাজিক পশ্চাত্পদতা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, নারী সমাজের বহুমাত্রিক অধিকার আদায় নারী শিক্ষার পথনির্দেশক হতে পেরেছিলেন বেগম রোকেয়া। বাঙালি মুসলমান সমাজে নারী জাগরণ নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া। তিনি প্রথমবারের মতো বাঙালি মুসলিম সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরেন, নারী স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতবাদ প্রচার করেন, অবরোধ প্রথার শিকল ভাঙেন। বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধেও তার লেখনী ছিল সোচ্চার।

তার লক্ষ্য ছিল, নারী শিক্ষার প্রসার, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মুসলমান সমাজের অবরোধ প্রথার অবসান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শিক্ষা ছাড়া নারী জাতির অগ্রগতি মুক্তি সম্ভব নয়; আর নারী মুক্তি ছাড়া কখনো একটি সভ্য সমাজ গড়ে উঠতে পারে না।

 

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন