জেমস বন্ডের নতুন ছবি নো টাইম টু ডাই নিয়ে আলোচনা, আগ্রহ দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। ছবির টিজার ও ট্রেইলার সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। জেমস বন্ড দুনিয়ার চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয়, ব্যবসাসফল এবং দীর্ঘকাল ধরে চলা ফ্র্যাঞ্চাইজি। ড্যানিয়েল ক্রেগ নো টাইম টু ডাইয়ে শেষবারের মতো জেমস বন্ডের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। মানে নো টাইম টু ডাইয়ের পর দর্শকরা পাবেন নতুন জেমস বন্ডকে।
নো টাইম টু ডাইয়ের ট্রেইলার মুক্তির
পর চলচ্চিত্র সমালোচকরা বলছেন এটা শুধু ছবির প্রচার নয়, সঙ্গে
দুনিয়ার সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডগুলোর প্রচারণাও।
বুধবার মুক্তি পেয়েছে নো টাইম টু ডাই ছবির ট্রেইলার। ইউটিউবে বন্ডের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট ছাড়াও আরো অনেক অ্যাকাউন্টে ছড়িয়ে পড়েছে ট্রেইলারটি। সব মিলিয়ে তিনদিনেই ভিউ কোটির ঘর ছাড়িয়েছে। ছবির ব্যবসার জন্য এটা সুখবর। নির্মাতারা আশা করছেন, নো টাইম টু ডাই কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার ব্যবসা করবে। ছবির বাজেটও ছিল অনেক—২৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে ধারণা করা হচ্ছে বাজেট ২৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে নো টাইম টু ডাই থেকে সরে দাঁড়ান পরিচালক ড্যানি বয়েল, তারপর থেকে ছবির বাজেট বেড়েছে রকেট গতিতে। ড্যানি চলে যাওয়ার পর শুটিং বন্ধ ছিল প্রায় ছয় মাস।
জেমস বন্ড চরিত্রটি নিজেই একটি
ব্র্যান্ড নাম। এর সঙ্গে আবার জড়িয়ে আছে দুনিয়ার অনেক নামিদামি ব্র্যান্ড। জেমস
বন্ডের স্রষ্টা ব্রিটিশ লেখক,
সাংবাদিক ও নৌ-গোয়েন্দা কর্মকর্তা তার সৃষ্ট গুপ্তচর
চরিত্রটিকে গর্ডন’স জিন, বেন্টলি গাড়ির কাছাকাছি রেখেছেন। জেমস বন্ডের উপন্যাসগুলোতেই সচেতনভাবে
বিভিন্ন নামি ব্র্যান্ডের পণ্যের উপস্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীকালে জেমস বন্ড যখন
বড় পর্দায় এলেন, তখনও এ ধারা অব্যাহত থেকেছে এবং বইয়ের পাতার চেয়ে অনেক জীবন্ত ও
কার্যকরভাবে।
জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির শুরুর দিকের ছবিগুলোয় বন্ডের সঙ্গে ‘বন্ড’ ছিল প্যান অ্যাম এয়ারলাইন এবং স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসনের আগ্নেয়াস্ত্র। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় ছবি গোল্ডফিঙ্গার-এ যুক্ত হয় বিলাসবহুল স্পোর্টস কার ব্র্যান্ড অ্যাসটন মার্টিন। ১৯৭৩-এ লাইভ অ্যান্ড লেট ডাই ছবিতে যুক্ত হয় ফরাসি শ্যাম্পেন ব্র্যান্ড বোলানজে। আরো যেসব ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রদর্শন ০০৭-এ দেখা যায়, তার মধ্যে আছে ক্যামেল, প্লেবয়, কেএফসি, সেভেনআপ ও টোবলারোন।
জেমস বন্ডের শুটিংয়ের গন্তব্য হওয়ার
জন্য অনেক দেশ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা করেছে,
অনেকে দিয়েছে কর ছাড়ের লোভনীয় অফার। নরওয়ে ৪২
লাখ পাউন্ড আর্থিক সুবিধা দিয়েছে জেমস বন্ড ফ্র্যাঞ্চাইজিকে শুটিং করার জন্য। এ
রকম দেশের তালিকায় আছে ইতালি,
জ্যামাইকা এবং ফারো আইল্যান্ডস; লন্ডন
ও স্কটল্যান্ডের বাইরে এসব দেশেই জেমস বন্ডের ছবির শুটিং হয়েছে। কোনো দেশে জেমস
বন্ডের শুটিং হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সুবিধা অনেক। নো টাইম টু ডাই ছবিরই একটা উদাহরণ
দেয়া যাক। ট্রেইলারে দেখানো কার চেজের দৃশ্যায়ন হয়েছে ইতালির ব্যাসিলিকাতার মাতেরা
শহরে। এ শহরের মেয়র আশা করছেন নো টাইম টু ডাই মুক্তি পেলে শুধু সেই দৃশ্যটি থাকার
জন্য স্থানীয় অর্থনীতিতে ১ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড যুক্ত হবে।
নো টাইম টু ডাই ছবির যে ট্রেইলার
মুক্তি দেয়া হয়েছে, তাতেও জড়িত আছে অর্থনীতি। ট্রেইলারে কোন কোন লোকেশন এবং পণ্য দেখানো
হবে, সেটা
নিয়ে হয়েছে আলোচনা ও সমঝোতা। পোস্টারে কী কী থাকবে, তাও বাণিজ্য সমঝোতার বাইরে নয়।
ঘড়ি
ক্যাসিনো রয়ালে এভা গ্রিন ড্যানিয়েল
ক্রেগকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি রোলেক্স ঘড়ি পরেছেন কিনা। ড্যানিয়েল মাথা ঝাঁকিয়ে
জবাব দেন, ‘ওমগা।’ এভা শুনে বলেন,
‘ঘড়িটা সুন্দর।’ নো টাইম টু ডাইয়ের ট্রেইলারে বন্ড
ড্যানিয়েল ক্রেগের কবজির ঘড়িটি দেখা গেছে অন্তত পাঁচবার। ঘড়িটি ওমেগার নতুন
সিমেস্টার ডাইভার ৩০০ এম ০০৭ সংস্করণ,
দাম সাড়ে ৬ হাজার পাউন্ড। ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছে
জেমস বন্ডের বিভিন্ন কাজে প্রয়োজনীতা মাথায় রেখে।
সুপারকার-সুপারবাইক
নো টাইম টু ডাইয়ের ট্রেইলার দেখে
ধারণা করা হচ্ছে, ছবির বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় হয়েছে অ্যাসটর মার্টিনের সুপার কারের
পেছনে। ট্রেইলারে দেখা গেছে,
অ্যাসটন মার্টিনের ডিবি ফাইভ, ভিএইট, ডিবিএস
সুপারলেগেরা এবং ভালহাল্লা ইলেকট্রিক সুপারকার। আরো দেখা গেছে, একটা
ট্রায়াম্প বোনভিল স্ক্র্যাম্বলার ১২০০ মোটরসাইকেল, নতুন মডেলের স্পিরিট ইয়ট।
জেমস বন্ডের পরনে কোন স্যুট থাকছে, সেটা
ভক্তদের কৌতূহলের বিষয়। যেকোনো ছবিতেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কোন পোশাক পরবেন, সেটা
ডিজাইনার, প্রযোজকের দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। তবে এবার ট্রেইলারে রামি মালেকের পরনের ‘পার্কা’ও আলোচনায়
এসেছে। পার্কা মানে বরফের দেশে মাথায় ঢাকনাযুক্ত এক রকমের পোশাক। একটি দৃশ্যে রামি
মালেককে ফ্যান্টমের মতো ফেসমাস্কও পরতে দেখা গেছে। ছবি মুক্তির পর হয়তো এ ফেসমাস্কও
জনপ্রিয় হয়ে যাবে।
নো টাইম টু ডাই মুক্তি পাবে ২০২০ সালের এপ্রিলে। দেখা যাক আরো কী কী চমক থাকে এ নতুন বন্ড ফিল্মে!