বগুড়াকে আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: মোহাম্মদ নাসিম

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বগুড়া

জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বগুড়াকে ওয়ামী লীগের দূর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এবার বগুড়াকে আওয়ামী লীগের দূর্গ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সাংগঠনিকভাবে যতটা প্রস্তুতি দরকার তার সবটায় করতে হবে। আমাদের আরো শক্তিশালী হয়ে গড়ে উঠতে হবে এই জেলায়।’

আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মকবুল হোসেন। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া সম্মেলন শেষ হয় বিকেল ৪টায়।

জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার এই সম্মেলনে এসে মোহাম্মদ নাসিম  বলেন, ‘দেশকে রাজনীতি শূন্য করতে জিয়াউর রহমান জাতীয় চারনেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। তদন্ত কমিশন গঠন করে জিয়াউর রহমানের বিচার করতে হবে। না হলে দেশের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থাকবে। জাতীয় চারনেতা বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেইমানি করেননি বলেই নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আজও সেই চক্রান্তকারী তাদের চক্রান্ত অব্যহত রেখেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন খুনি বিএনপি জামাত চক্রের মূল টার্গেট। তার উপর ১৯ বার হামলা হয়েছে। চক্রান্ত চলছে, শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে। নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।’

সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের আন্দোলনেরও সমালোচনা করেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, ‘ওরা বিচার মানে না, আইন মানে না, জোর করে খালেদাকে মুক্ত করতে চায়। জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আমরা কারাগারে ছিলাম। আমরা আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়েছি। তাই আদালত ভাঙচুরের বিচার বাংলার জনগণ করবে ইনশাল্লাহ।’ তিনি সকল চক্রান্ত রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে দেশ। আওয়ামী লীগ মানুষের মন জয় করে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণের সাথে ভাল আচরণ করতে হবে। এমন কোন আচরণ করা যাবে না যাতে মানুষ কষ্ট পায়।’

সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, দুর্নীতির বরপুত্র, সন্ত্রাসের জন্মদাতা তারেক রহমান। সারাদেশে খুনের কারবালা করেছিল হাওয়া ভবন থেকে। আজ দেশ থেকেব পালিয়ে গেছে। বিএনপির সময়ে বগুড়া ছিল সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্য। আজ সেখানে সুন্দর, শান্তিময় পরিবেশ। মির্জা ফখরুলের বিক্ষোভ ডাকের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অশান্তি করলে আমরা মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছি।

সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান এমপি বলেন, উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি কর্মী বগুড়া আওয়ামী লীগের। কম সময়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমবেত করতে পারে বগুড়া আওয়ামী লীগ। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে আজ উন্নয়নে বেশি গুরত্বূ দেয়া হয়েছে। সংগঠন শক্তিশালী করতে সকলকে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তীলে তীলে সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নেতাকর্মীদের নির্যাতন, হত্যা, কারাবন্দি করা হয়েছে। তবু আওয়ামী লীগকে দমিয়ে দেয়া যায়নি। আমরা কখনও পরাজয় জানি না, আমরা জানি এগিয়ে যেতে। আমাদের এই এগিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। 

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনির সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, বগুড়া-৫ আসনের এমপি হাবিবর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।

সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান মজনু। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন নবাব। বক্তব্য রাখেন আমিনুল ইসলাম ডাবলু, নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, লাইজিন আরা লীনা। সম্মেলনে ২০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে ২য় অধিবেশনে বেলা সাড়ে ৩টায় মোহাম্মদ নাসিম এমপি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির নাম ঘোষণা করেন। ঘোষিত কমিটিতে রয়েছেন, জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে মজিবর রহমান মজনু, সহ সভাপতি টি জামান নিকেতা, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, সাগর কুমার রায়, আসাদুর রহমান দুলু ও অর্থ সম্পাদক হিসেবে প্রয়াত আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের ছেলে বগুড়া চেম্বার সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন। এ ঘোষণার পরপরই সম্মেলনস্থলে কড়তালিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে। 

এদিকে সম্মেলন শেষে কয়েকজন নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই চেয়ার ভাঙচুর করে ও ছুঁড়ে ফেলেন। এর আগে ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন