সম্প্রতি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুই
মাস পর এ তথ্য প্রকাশ করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। আর কারখানা
বন্ধ থাকাকালীনও কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থান
হয়েছে। পাশাপাশি হঠাৎ করে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে
বেড়েছে। কারখানা বন্ধ থাকার পরও শেয়ারদর ও লেনদেন বাড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজরে
এসেছে। কমিশন সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী
পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন,
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা বন্ধ থাকা
সত্ত্বেও কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাছাড়া এ বিষয়ে
গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে
আইনবহির্ভূত কিছু হয়েছে কিনা,
সেটি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এরই মধ্যে
নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে কমিশনকে অবগত করবে।
এ বছরের ১ অক্টোবর ডিএসইতে
কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১৮ টাকা ৮০ পয়সা,
যা ২৮ অক্টোবর কমে ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। এর
পর থেকেই আবার কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়তে থাকে এবং ২৬ নভেম্বর ২২ টাকায় দাঁড়ায়।
কারখানা বন্ধের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পরও মঙ্গলবার কোম্পানিটির শেয়ারদর ৯ দশমিক ৫৭
শতাংশ বেড়ে ২০ টাকা ৬০ পয়সায় দাঁড়ায়। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির ১৯ লাখ ৮৩ হাজার
১১৬টি শেয়ার ১ হাজার ২৮১ বার হাতবদল হয়েছে,
যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত দুই কার্যদিবসে
শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯ শতাংশ।
এদিকে গতকাল গাজীপুরের শ্রীপুরে
অবস্থিত মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কোম্পানিটির
কারখানায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেখানে কোনো ধরনের
কর্মচাঞ্চল্য নেই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল
ফিতরের পর থেকেই অর্থাৎ এ বছরের জুনের পর থেকে কোম্পানিটির কারখানার উৎপাদন
কার্যক্রম কমতে থাকে। আর ঈদুল আজহার আগেই অর্থাৎ এ বছরের আগস্টে কারখানা বন্ধ হয়ে
যায়। প্রথমে কারখানা বন্ধের পর শ্রমিকরা বেতন-ভাতার জন্য বিক্ষোভ করলেও পরবর্তী
সময়ে কর্তৃপক্ষ তাদের পাওনা পরিশোধ করে দেয়।
অবশ্য এর আগে কারখানা বন্ধ থাকার
বিষয়ে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব দেওয়ান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বণিক
বার্তাকে জানিয়েছিলেন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে পাওনা নিয়ে সমস্যার কারণে এ বছরের
জুনের পর থেকেই বন্ডেড ওয়্যারহাউজের সুবিধা বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় বাজার থেকে
বেশি দামে কাঁচামাল কিনে সীমিত আকারে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারখানা চালু
রাখা হয়েছিল। কিন্তু মূলধনের অভাবে অক্টোবর থেকে আর কারখানা চালু রাখা সম্ভব হয়নি।
তবে ব্যাংকের পাওনা অর্থের ৫ শতাংশ পরিশোধ করার আপাপত সমস্যা মিটে গেছে এবং এ
মাসের মধ্যেই এলসি খুলে কাঁচামাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে বলেও
জানিয়েছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ৩০
জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে
শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৪ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে মিরাকল
ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য
২১ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা
(এজিএম)
আহ্বান করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত
রেকর্ড ডেট ছিল ২০ নভেম্বর। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে
২৩ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা। ৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট
সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকা ৮৫ পয়সা,
যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪১ টাকা ৭১ পয়সা।
চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা
এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির
কর-পরবর্তী
৪ কোটি ২২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে,
যেখানে এর আগের বছরে ৮৮ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল।
এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা, যেখানে
আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২৮ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির
এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৭ টাকা ৬১ পয়সায়।
প্লাস্টিক প্যাকেজিং উৎপাদক মিরাকল
ইন্ডাস্ট্রিজ ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল
ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করে। আর ১৯৯৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু
করে। মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ বিভিন্ন ধরনের পলিপ্রপেলিন ওভেন ব্যাগ, লিনার
ব্যাগ, ভ্যালু অ্যাডেড এফআইবিসি এবং তারপলিন উৎপাদন করে।