খুলনা বিসিক : ৪১ বছরেও পূর্ণতা পায়নি

বণিক বার্তা প্রতিনিধি খুলনা

সমস্যায় জর্জরিত খুলনার শিরোমণিতে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরী ৪১ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাসহ অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ার পাশাপাশি এতে দিন দিন বাড়ছে রুগ্ণ শিল্পের সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেহাল রাস্তাঘাট, গ্যাসের অভাবে বিদ্যুিনর্ভরতা ও অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ সমস্যার কারণে খুলনার বিসিক শিল্পনগরী ধুঁকছে।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালের ৮ মার্চ খুলনা বিসিক শিল্পনগরী প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ১৯৭৮ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। পরে মোট ২৪০টি প্লট ৮৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত প্লটে গড়ে ওঠে ৯৬টি শিল্প ইউনিট। বিভিন্ন সময় এখানে গড়ে ওঠে কেমিক্যাল, পাটজাত, প্রকৌশল শিল্প, বনজ, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও খাদ্যজাত শিল্প ইউনিট। বর্তমানে এসব শিল্প ইউনিটের ২০টি এরই মধ্যে রুগ্ণ শিল্পের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ, অব্যাহত লোকসান ও ব্যাংকঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো রুগ্ণ হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে বিসিক শিল্পমালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক কাজী আমজাদ হোসেন বলেন, কর্তৃপক্ষ শিল্পমালিকদের সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে তিন দফা সার্ভিস চার্জ বাড়িয়েছে। প্রথম দফায় সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার টাকা। দ্বিতীয় দফায় ৯ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ তা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ হাজার টাকা, যা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।

খুলনা বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা শেখ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকঋণ ও লোকসানের কারণে রুগ্ণ শিল্প ইউনিটগুলোর বিষয়ে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাংকের মামলা চলছে। এছাড়া বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খুলনা শিল্পনগরীতে কর্মরত শ্রমিক ইমরান হোসেন বলেন, এখানকার রাস্তা খানাখন্দে ভরা। বিসিকের অন্যতম প্রধান রাস্তাটি ২০ বছরেও সংস্কার হয়নি। ফলে বর্ষার সময় এ রাস্তাটিতে হাঁটুপানি জমে থাকে। এতে রাস্তা ঘেঁষে থাকা কয়েকটি চানাচুর কারখানাসহ ছোট-বড় বেশকিছু কারখানা পানির কারণে সমস্যায় পড়ে।

খুলনা বিসিকে অবস্থিত আয়োজন চানাচুর কোম্পানির ব্যবস্থাপক মো. সেলিম বলেন, সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় উদ্যোক্তারা গভীর সংকটে পড়েন। রাস্তা খারাপ হওয়ায় অনেক সময় কারখানা থেকে পণ্য নিয়ে বের হতে বা কারখানার সামনে যাওয়ার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এছাড়া কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ভ্যান বা অন্য কোনো মাধ্যমে সড়কে এনে ট্রাকে বোঝাই করতে হয়। এতে অতিরিক্ত ব্যয়সহ সময়ের অপচয় হয়। এসবের বাইরে খুলনা অঞ্চলে গ্যাসের সুবিধা না থাকায় এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন সময় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদিত পণ্যের খরচ বেড়ে যায়।

এবি কোল্ডস্টোরেজের নিরাপত্তাকর্মী মো. লিমন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। নতুন বছর থেকে এখানে কোলস্টোরেজ কার্যক্রম আবার শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে খুলনা বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা শেখ রিয়াজুল ইসলাম বলেন, খুলনা শিল্পনগরীর উন্নয়নের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ভঙ্গুর রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাস্তা, ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ কাজ শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য রাস্তা উন্নয়নে ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৮ হাজার, ড্রেন উন্নয়নে ১ কোটি ৮৪ লাখ, পানির পাইপলাইন স্থাপনে ২০ লাখ, পাইপলাইন মেরামত ও সংস্কারের জন্য ৫ লাখ, প্রশাসনিক ভবনের সীমানাপ্রাচীরের জন্য ৫ লাখ ও বিসিকের প্রধান ফটকটি নতুনভাবে তৈরি করার জন্য ৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন