৪০০ কোটি ডলার তহবিলের

খোঁজে ভারতী এয়ারটেল

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) বাবদ বকেয়া অর্থ পরিশোধে ৪০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে ভারতী এয়ারটেল। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদও নতুন তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগকে অনুমোদন দিয়েছে। খবর টেলিকম লিড।

২০০৫ সাল থেকে অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর (এজিআর) সংজ্ঞা নিয়ে ভারতের ব্যক্তিখাতের টেলিকম কোম্পানি এবং দেশটির টেলিকম বিভাগের (ডিওটি) মধ্যে আইনি লড়াই চলে আসছে। গত অক্টোবরে এজিআর নিয়ে ভারতী এয়ারটেলসহ রিলায়েন্স কমিউনিকেশন ও ভোডাফোন আইডিয়ার মতো টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিওটির সংজ্ঞাকে বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে বকেয়া পরিশোধে অপারেটরগুলোকে ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন। আগামী মাসের মধ্যে এজিআর বাবদ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ৩৫ হাজার ৫০০ কোটি রুপি পরিশোধ করতে চায় ভারতী এয়ারটেল। যে কারণে নতুন করে বড় অংকের তহবিল সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী, আগামী মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে ভারতী এয়ারটেল, রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও ভোডাফোন-আইডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদ ও জরিমানাসহ মোট ৯২ হাজার ৬৪১ কোটি রুপির বকেয়া দেনা পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম ইউসেজ চার্জ বাবদ মোট ২৩ হাজার ১৮৯ কোটি রুপি, সুদ ৪১ হাজার ৬৫০ কোটি রুপি, জরিমানা ১০ হাজার ৯২৩ কোটি রুপি এবং জরিমানার ওপর সুদ ১৬ হাজার ৮৭৮ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে।

এজিআর বাবদ ভারতী এয়ারটেলকে বকেয়া পরিশোধ করতে হবে মোট ৩৫ হাজার ৫৮৬ কোটি রুপি। এর মধ্যে ২১ হাজার ৬৮২ কোটি রুপি বকেয়া এবং সুদ, জরিমানা ও জরিমানার ওপর সুদ বাবদ ১৬ হাজার ১৫২ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) ১৪ বছর আগে ডিওটি নির্ধারিত এজিআরের সংজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম মামলা দায়ের করেছিল। ওই মামলায় দাবি করা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার এজিআরে যে উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেগুলো টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (টিআরএআই) সুপারিশে প্রণয়নকৃত টেলিগ্রাফ অ্যাক্টের পরিপন্থী।

সিওএআইয়ের দাবি, ডিওটি নির্ধারিত বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেলফোন অপারেটরগুলো এরই মধ্যে ৮৫ শতাংশ বর্ধিত ফি পরিশোধ করেছে। বাকি ১৫ শতাংশ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে।

গত অক্টোবরে আদালত জানিয়েছেন, অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউর মধ্যে লাইসেন্স ফি ছাড়াও অন্যান্য বিষয় যুক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে মূল সম্পদ বিক্রি ও ইন্স্যুরেন্স দাবির বিষয়টি পড়বে না। এ রায় ভারতের টেলিকম বিভাগের জন্য স্বস্তিকর হলেও সেলফোন অপারেটরগুলোর জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। এমনিতে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে বড় অংকের বকেয়া পরিশোধের রায় বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

আদালতের রায় ডিওটির পক্ষে যাওয়ায় ভারতী এয়ারটেল জানিয়েছে, এ রায়ে আমরা হতাশ। এজিআরের সংজ্ঞা নিয়ে ডিওটি ও টেলিকম অপারেটররা দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছে। আমরা টেলিকম খাতের উন্নয়নে ও গ্রাহককে উন্নত সেবা দিতে কোটি কোটি রুপি অর্থ বিনিয়োগ করেছি। আর্থিক দিক বিবেচনায় টেলিযোগাযোগ খাত যখন সংকটপূর্ণ সময় পার করছে, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত খাতটির জন্য নেতিবাচক হবে।

ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। ভারতী এয়ারটেল স্থানীয় বাজারে টিকে থাকতে গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে। প্রি ও পোস্ট আইপিওর মাধ্যমে এ অর্থ সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, এজিআর নিয়ে আদালতের রায় ভারতের ১৫টি সেলফোন অপারেটরের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে ব্যক্তিখাতের বড় দুটি অপারেটরের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সরকারের অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। সেলফোন অপারেটরগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়া এ আর্থিক বোঝা দূর করার জুুতসই পদ্ধতি বের করার বিকল্প নেই। কারণ ভারতের টেলিকম বিভাগের দাবি করা ৯২ হাজার ৬৪১ কোটি রুপি বকেয়া পরিশোধ করার মতো অবস্থায় নেই ভারতী এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া ও রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস। এর ওপর রয়েছে সুদ, জরিমানা এবং জরিমানার ওপর নির্ধারিত সুদের বোঝা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন