খিচুড়ি থেকে কেজেরি

বিদেশী ভাষায় উপমহাদেশের খাবার

শানজিদ অর্ণব

ভাষা মানুষের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সাক্ষী। খাদ্যের যাত্রাপথেরও হদিস পাওয়া যায় ভাষার সূত্র ধরে। সংস্কৃত বা হিন্দি ভাষার খিচিড় ব্রিটিশ সাহেবদের ইংরেজি ভাষায় গিয়ে হয়েছে কেজেরি। ভারতবর্ষে যখন ব্রিটিশ শাসন, তখন সাহেবরা অনেকেই প্রাতরাশ সারতেন কেজেরি মানে খিচিড় দিয়ে। খিচিড় আমাদের বাঙালিদের খিচুড়ি। মিসরীয়দের কাছে কুশারি। বিদেশী পরিব্রাজকদের অনেকেই বর্ণনা করেছেন যে সন্ধ্যায় ভারতীয়রা চাল আর ডালের মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ি খায়।

ভাষায় খাবারের নামের আদান-প্রদানের আগে ভাষায় খাবারের নামের গুরুত্ব নিয়ে একটা ঐতিহাসিক কাহিনী আলোচনা করা যাক। ভাষার সংক্ষিপ্তকরণ নিশ্চয়ই কৌতুকরসের প্রাণ, কিন্তু তা অনেক সময় আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারে। খাদ্যের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। ইতিহাসে তার প্রমাণও আছে। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দে ৮০ বছর বয়সে কুশিনগরে গৌতম বুদ্ধের প্রয়াণ ঘটেছিল। শিষ্য কামার চণ্ডের পরিবেশন করা খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর বুদ্ধ মারা যান। যে খাবার খেয়ে বুদ্ধ মারা গিয়েছিলেন, তার নাম পরবর্তী সময়ে উল্লেখ করা হয় শূকরমদ্দভ হিসেবে। পঞ্চম শতাব্দীর ভারতীয় বৌদ্ধ ভাষ্যকার, অনুবাদক, দার্শনিক বুদ্ধ ঘোষ জানিয়েছেন, বুদ্ধের খাওয়া সেই শেষ খাবারটি ছিল একটি চমত্কার শূকরের মাংসমাঝামাঝি বয়সের শূকর। নরম, তৈলাক্ত মাংস চণ্ডের সরাসরি নির্দেশনায় রান্না হয়েছিল। পরবর্তী ভাষ্যকার ধম্মপাল যুক্ত করে যান যে বুদ্ধের শেষ খাবারের বিষয়টি মহাথাকথাকা নামের একটি প্রাচীন ভাষ্য থেকে এসেছে, যা তখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

বুদ্ধের শিক্ষা সম্পর্কে যারা ন্যূনতম ধারণা রাখেন, তারা নিশ্চয়ই উপরের তথ্য থেকে অবাক না হয়ে পারেন না। কারণ বুদ্ধের শিক্ষানুযায়ী মাংস তখনই খাওয়া যেতে পারে, যখন আর কোনো উপায় হাতে থাকবে না। ধম্মপালের মতে, বুদ্ধের শেষ খাবারটি ছিল হয় শূকরের কামড় দ্বারা নরম হওয়া বাঁশের কচি শাখা অথবা শূকরের কামড়ে নরম হওয়া কোনো কিছুর ওপর গজানো মাশরুম। প্রাচীন চীনা উৎসগুলো মতামত সমর্থন করে। চীনা দলিলে খাবারের মূল উপাদান হিসেবে যে চৈনিক শব্দটি আছে, তার অর্থ স্যান্ডালউড মাশরুম। ধম্মপাল স্বয়ং একটি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন আহিচাত্তক, যার অর্থ সর্প-ছাতা, আর তাই বলা যায়, শব্দটি দিয়ে ধম্মপাল নিশ্চয় মাশরুমজাতীয় কিছুকেই বোঝাতে চেয়েছেন। পালি ভাষা পণ্ডিত রায়স ডেভিডস শব্দটির অনুবাদ করেছেন কন্দজাতীয় ছত্রাক হিসেবে। রাজানিঘাণ্টুতে বেশ কয়েকটি ঔষধি উদ্ভিদের নাম আছে শূকরের সঙ্গে যুক্ত করে, যেমনশূকরকন্দ, শূকরশ্রেষ্ঠ। কোনো জায়গাতেই মদ্দভ মাংসের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দেখা যায় না। বৌদ্ধ শাস্ত্রে শূকরের মাংসকে শূকরমাংস বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। শূকরমদ্দভ-এর সঙ্গে শূকরের মাংসের কোনো সম্পর্কই নেই।

চণ্ডার বানানো খাবার খেয়ে বুদ্ধ সম্ভবত আমাশয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং এটাই ছিল তার মৃত্যুর কারণ। আবার এমনও হতে পারে, মাশরুমে থাকা বিষাক্ত কোনো উপাদান বুদ্ধের মৃত্যু ঘটিয়েছিল।

দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে আরব, গ্রিস রোমের বাণিজ্য সম্পর্কের হদিস পাওয়া যাবে শব্দে। কারণ শব্দও বাণিজ্য পণ্যের মতো আদান-প্রদান হয়েছিল। ভাতকে গ্রিক ভাষায় বলে ওরাইজা (oryza), ধানের বৈজ্ঞানিক নামের গণ অংশটির নামও ওরাইজা। ধারণা করা হয়, ওরাইজা শব্দটির উদ্ভব হয়েছিল তামিল আরিসি শব্দ থেকে। তামিল শব্দটি খোদ সংস্কৃত নতুবা প্রাচীন ফারসি ভারিসি থেকে উদ্ভূত। তামিল পিপ্পালি থেকে এসেছে লাতিন পেপেরি। দারচিনির গ্রিক নাম কার্ফিয়া (শাখা) এসেছিল কারুভা বা কারাপ্পা-পাত্তাই থেকে। গ্রিক থেকে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন