জনসংখ্যা নীতি নিয়ে অবহেলা কেন?

ড. মইনুল ইসলাম

গত ২২ নভেম্বর দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত জনসংখ্যা নীতি নিয়ে ওই পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত একটি খবর আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে: দেশের জনসংখ্যা নীতি যুগোপযোগী করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে সর্বোচ্চ জাতীয় কমিটি রয়েছে, সে কমিটি নাকি ২০১০ সালের পর একবারও সভায় মিলিত হয়নি। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতি ভীষণ অবহেলার শিকার হয়ে রয়েছে। আত্মঘাতী অবহেলা কেন? বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সাল থেকে যেভাবে জনসংখ্যা পরিকল্পনা কার্যক্রমকে অনেকখানি গুটিয়ে ফেলা হয়েছে, তার যুক্তি কী? প্রচারমাধ্যমগুলো বিষয়টাকে এখন আর গুরুত্বই দিচ্ছে না কার্যক্রমের পেছনে ব্যয়িত অর্থায়ন প্রবাহটা শুকিয়ে যাওয়ায়। এমনকি যেসব এনজিও পরিবার পরিকল্পনাকে উৎসাহিত করত, তাদেরও নাকি সরকারের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে! বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ যে বর্তমান পর্যায়ে ১৫-৪৫ বছরের তরুণ-তরুণী যুবক-যুবতী, তার ফলে উদ্ভূতডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডবাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে বলেই তার সরকার বিশ্বাস করে। দৃষ্টিভঙ্গি অংশত ইতিবাচক হলেও এত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে জনসংখ্যা পরিকল্পনাকে অবহেলা করা মারাত্মক ভুল।

প্রথমেই বলছি, জনসংখ্যাকে কম করে দেখানোর অভ্যাস দেশের সব সরকারের মজ্জাগত হয়ে গেছে। ২০১১ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্যাকে মারাত্মকভাবে কম (১৬ কোটিরও কম) দেখানোর অভিযোগ ওঠার পর বিআইডিএসের পুনর্গণনা জরিপে প্রমাণিত হয়েছিল যে দেশের উল্লেখযোগ্য অনুপাতের খানা-বাড়িতে কোনো গণনাকারী আদৌ যায়নি। ২০১৯ সালে সরকারিভাবে দেশের প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৭ কোটির নিচে রয়েছে দাবি করা হলেও প্রকৃত জনসংখ্যা হয়তো ১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ এবং বৃহৎ জনসংখ্যার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ। বিশ শতকের সত্তরের দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে যে দৃঢ়মূল উদ্বেগ পরিলক্ষিত হতো, তার পেছনে কৃষিজমির তুলনায় জনসংখ্যার এই অতিঘনত্বকে দায়ী করা হতো। তাই দেশে জনসংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি সমস্যার আসল চেহারাকে লুকানোর অপপ্রয়াস, যা নিকৃষ্ট ফাঁকিবাজি। এর মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে কৃত্রিমভাবে কমিয়ে দেখানোর একটা পরিকল্পিত অপপ্রয়াসই ধরা পড়ে। জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার কমানোকে যেহেতু সরকারের সাফল্য হিসেবে জাহির করা যায়, সেজন্য এক্ষেত্রে কথিত সাফল্যের জন্য স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয়ই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কয়েকটি পুরস্কারও বাগিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে ঘোষণা করেছিলেন, জনসংখ্যাই বাংলাদেশেরএক নম্বর সমস্যা আমরা জনসংখ্যাকে এমন নেতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনা করাকে কখনই সমর্থন করিনি। বাংলাদেশের অনুন্নয়নের প্রধান কারণ দুর্নীতি পুঁজি লুণ্ঠন থেকে মনোযোগ সরানোর অপপ্রয়াসেই জনসংখ্যা সমস্যাকে তিনি হয়তোএক নম্বর সমস্যার মর্যাদাদিয়েছিলেন! কিন্তু দেশের আয়তনের তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেকাম্য সাইজথেকে বেশি, তা অস্বীকার করব কেন?

আরেকটি বিষয়ও জনসংখ্যার সঠিক চিত্র পেতে দিচ্ছে না। তা হলো বাংলাদেশীদের অভিবাসন প্রবাহ। মনে রাখতে হবে, চারটি পরিমাপের যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার হিসাব করা হয়: মোট জন্মহার, মোট মৃত্যুহার, বিদেশ থেকে দেশে বছরে মোট অভিবাসন এবং

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন