পশ্চিমে বিয়ে বা জাঁকজমক অনুষ্ঠানের জন্য পোশাক ভাড়া দেয়ার চল রয়েছে অনেক দিন ধরে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলেও বিয়ে, ছবি ওঠানো বা বড়
উৎসবের জন্য পোশাক ভাড়া দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে কোনো কোনো দেশে বা অঞ্চলে পোশাক ভাড়া নিতে দেখা গেলও এখনো তা জনপ্রিয় সংস্কৃতি হিসেবে আবির্ভাব হতে পারেনি। নতুন
ব্র্যান্ড বা সেকেন্ডহ্যান্ড যা-ই হোক, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে নিজ পরিধেয় পোশাক আপন করে রাখার প্রবণতা দেখা যায় বেশি।
তবে এ সংস্কৃতি বা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। ‘জেট প্রজন্ম’ তথা চলতি শতাব্দীতে জন্ম নেয়া তরুণদের মধ্যে কাপড় নিয়ে মনোভাব দ্রুত বদলাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পোশাক ভাড়ার ফ্যাশন হাউজ ‘মাই ওয়্যারড্রোব এইচকিউ’র চেয়ারম্যান জেন শেফার্ডসন। তিনি বলেন, ৬০ পাউন্ড ব্যয় করে নামিদামি যেকোনো ব্র্যান্ডের একটি হ্যান্ডব্যাগ বা একজোড়া জুতো আপনি ভাড়া নিতে পারেন। অথচ একই পণ্যটি কিনতে গেলে আপনাকে গুনতে হবে বিশাল অংকের অর্থ, যা তরুণদের অনেকের সামর্থ্যে কুলায় না। এছাড়া বর্তমান জেট প্রজন্মের সামনে অনলাইনে ৫ পাউন্ডে জামা কেনার সুযোগ থাকায় এদের অনেকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের জামা কেনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে যাদের কাছে বিখ্যাত ব্র্যান্ডের গহনাগাঁটি, কাপড়, হ্যান্ডব্যাগ, জামা, জুতো বা ভাড়া দেয়ার মতো এ রকম অন্য জিনিসপত্র রয়েছে, তারা এসব ভাড়া দিয়ে আয় করতে পারেন বলেও জানান শেফার্ডসন।
ঝানু এ খুচরা বিশেষজ্ঞ বলেন, বিশেষ পার্টি বা অনুষ্ঠানের জন্য আপনার পোশাক প্রয়োজন হলে, সেক্ষেত্রে কয়েকশ পাউন্ড ব্যয় না করে দরকারি জামা কিংবা অন্য কিছু আপনি সুলভে ভাড়া নিতে পারেন। নিজেদের ব্যয় সম্পর্কে একটু সচেতন হওয়ার ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এদিকে জামা ভাড়া দেয়ার ক্রমেই বর্ধমান ধারা ফাস্ট ফ্যাশন বা হাল ফ্যাশনকে কতটা মোকাবেলা করতে পারছে বা পারবে, সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে নানা মত রয়েছে। এ সম্পর্কে মাই ওয়্যারড্রবের চেয়ারম্যান বলেন, পোশাক ভাড়া দেয়ার যে প্রথা গড়ে উঠছে, তা রাতারাতি হাল ফ্যাশনের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। তবে একটা সময় মানুষের আচরণে, রুচিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
পোশাক ভাড়া দেয়া-নেয়া নিয়ে ভিন্ন্ন মত থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের আনাচ-কানাচে এ রেওয়াজ বাড়ছে। বিখ্যাত মার্কিন পোশাক ভাড়া প্রতিষ্ঠান ‘রেন্ট দ্য রানওয়ে’ সম্প্রতি ১০০ কোটি ডলার (৭৭ কোটি পাউন্ড) আয়ের কথা জানিয়েছে। ২০০৯ সালে যাত্রা করা রানওয়ের প্রায় এক লাখ গ্রাহক রয়েছে, যারা ১৬০ ডলার দিয়ে এক মাসের জন্য গ্রাহক হন। বিনিময়ে এক মাসে যত খুশি পোশাক ভাড়া নিতে পারেন গ্রাহকরা।
এদিকে আমেরিকান ঈগল, আরবান আউটফিটারস, অ্যান টেইলরসহ মূলধারার অনেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড পোশাক ভাড়া দেয়ার দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া ইউরোপের খ্যাতনামা খুচরা ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএমও সম্প্রতি নিজেদের স্টকহোমের শোরুমে পোশাক ভাড়া
কার্যক্রম শুরু করেছে।
নতুন এ খাত সম্পর্কে খুচরা বিশেষজ্ঞ নাতালি বার্গ বলেন, পোশাক ভাড়া দেয়ার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। একসময় এটি পোশাকের খুচরা দোকানিদের জনপ্রিয় সেবা খাতে পরিণত হবে। কারণ এতে করে একই সঙ্গে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো ও সমসাময়িক প্রবণতার সঙ্গে তাল মেলানো সম্ভব হবে।
সূত্র:
বিবিসি