ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে বুয়েট থেকে বহিষ্কার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) র‌্যাগিং ও রাজনীতিতে কোনো শিক্ষার্থী জড়িত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি চিরতরে বহিষ্কারের নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানের স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এতথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, র‍্যাগিংয়ের কারণে কোনো ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণ হলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অভিযুক্ত ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করবে। এছাড়া অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। এই বিবৃতি জারির মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির সব কটি পূরণ হলো।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো মেয়াদে বহিষ্কার।

বিবৃতিতে র‍্যাগিং প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কোনো ছাত্রের মৃত্যুর শাস্তি বুয়েট থেকে বহিষ্কার ও থানায় মামলা দায়ের। কোনো ছাত্র গুরুতর শারীরিক ক্ষতি বা মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হলেও অভিযুক্তকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে।

মৌখিক বা শারীরিক লাঞ্ছনা এবং সাময়িক মানসিক ক্ষতিসহ এ-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে সতর্কতা, জরিমানা, হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার বা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিরত রাখা। এ ধরনের অপরাধীকে শিক্ষাজীবনে ফিরতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক করে দেওয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাউন্সেলিং করতে হবে।

উল্লেখ্য,৬ অক্টোবর বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরে বাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এরপর থেকে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। গত ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্র জমার প্রতিক্রিয়ায় ১৪ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন, তিনটি দাবি বাস্তবায়ন হলে তাঁরা একাডেমিক অসহযোগ থেকে সরে গিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন। সেই দাবিগুলোর একটি ছিল অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার। দাবি অনুযায়ী ২৬ জন শিক্ষার্থীকে আজীবন বা স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় ৬ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়।

এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে ২৫ জনকে আসামি করে এই মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আবরার হত্যায় সরাসরি অংশে নেয় ১১ জন। বাকি ১৪ জন হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত রয়েছে। মোট হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। আসামি ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

২১জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম আবরারের বাবার করা হত্যা মামলার এজাহারে আছে। তারা হলেন, মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা ও এ এস এম নাজমুস সাদাত।

বাকি ৫ জনের নাম তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তারা হলেন, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু। পলাতক আছেন চারজন। পলাতক জিসান, তানিন ও মোর্শেদের নাম মামলার এজাহারে রয়েছে। এজাহারের বাইরে আরেক আসামি হলেন রাফি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন