বাংলাদেশী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের
অনুকূলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের
(এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট অর্জনের লক্ষ্যে যেসব
ইস্যুতে উন্নতি করা প্রয়োজন,
সেসব বিষয়ে দ্রুত উন্নতির কাজ চলছে। এ সনদ
প্রাপ্তিতে যেসব বাধা আছে তা দূর করা প্রয়োজন। গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে
আয়োজিত ‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ অবহিতকরণ’ শীর্ষক
কর্মশালায় এ তাগিদ দেন বক্তারা।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান
অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প
প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। শিল্প মন্ত্রণালয় ও ইআরএফের যৌথ আয়োজনের
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন শিল্প সচিব মো.
আবদুল হালিম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ইআরএফের
সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, তৈরি
পোশাক শিল্পের চেয়ে চামড়া শিল্প অনেক পুরনো হলেও প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রায় ১
হাজার কোটি টাকার ফিনিশড লেদার আমদানি হয়। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানি খাত হিসেবে
চামড়া শিল্পের এ দুরবস্থা প্রত্যাশিত নয়। এক্ষেত্রে তারা গণমাধ্যমে চামড়া
শিল্পবিষয়ক ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের জন্য সংবাদকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অচিরেই বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পকে শিশুশ্রমমুক্ত শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে
তারা জানান।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ
হুমায়ূন বলেছেন, বাংলাদেশী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অনুকূলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট
অর্জনের লক্ষ্যে যেসব ইস্যুতে উন্নতি করা প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে দ্রুত উন্নতির কাজ চলছে।
এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশনের যোগ্যতা অর্জনের অতি সামান্য অংশ সিইটিপি ও চামড়া
শিল্পনগরী প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বাকি বেশির ভাগ বিষয়ই ট্যানারি
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শিল্প মন্ত্রণালয় চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্প নথি
অনুযায়ী সিইটিপি ও চামড়া শিল্পনগরীর সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। পাশাপাশি ট্যানারি
মালিকদেরও নিজেদের স্বার্থে কারখানাকে কমপ্লায়েন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা
করা সরকারের কাজ নয়। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন এবং সরকার ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয়
নীতিসহায়তা দেবে। ব্যবসাবান্ধব বর্তমান সরকার দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের
উন্নয়ন ও রফতানি প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে
২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার থাকলেও বাংলাদেশ এ
খাতে মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করছে। সরকার ২০২১
সাল নাগাদ চামড়া শিল্প খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফাতনির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ
করছে। এক্ষেত্রে চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অতীতের ধারাবাহিকতায়
সরকারের নীতিসহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, চামড়া
শিল্পের কাঁচামালে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে ফিনিশড
চামড়া আমদানি হচ্ছে। এতে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় হচ্ছে। তিনি দেশীয় চামড়া
প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশ্বমানের চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে উন্নত
প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের তাগিদ দেন। বর্তমান সরকার সাভারের চামড়া
শিল্পনগরীতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সিইটিপি স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তিনি এ
নগরীতে স্থানান্তরিত ট্যানারি কারখানাগুলো এলডব্লিউজি কমপ্লায়েন্ট অনুযায়ী গড়ে
তুলতে উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্প সচিব বলেন, চামড়া
শিল্পের উন্নয়নে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার, ট্যানারি
মালিক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চামড়া শিল্পের উন্নয়নের পথে বিদ্যমান
প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে এর সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে
সরকার কিংবা ব্যবসায়ীরা আলাদা কোনো পক্ষ নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।