জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার আশ্বাস সত্ত্বেও আরো বেশি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকারী দেশ চীন। একই সঙ্গে আরো কয়েক ডজন নতুন কয়লা খনির অনুমোদন দিয়েছে দেশটি। খবর রয়টার্স।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে জাতিসংঘের চলমান জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ২০২১-২৩ নীতি পরিকল্পনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের আওতায় রয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের একটি নতুন প্রতিবেদন প্রকাশের পর চীনের এ নীতি পরিকল্পনা সবার জন্য উদ্বেগ তৈরি করেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত করতে বিশ্বকে এক দশক ধরে প্রতি বছর ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমাতে হবে।
কিন্তু চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর হওয়ার পর, শিল্প পরিসংখ্যানের পাশাপাশি নেতা ও শিল্পসংশ্লিষ্ট কর্তকর্তাদের বক্তব্য থেকে দেশটির বিদ্যুতের জন্য কয়লার দিকে ঝুঁকে পড়ার আগ্রহের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির পুরনো খনি অঞ্চলগুলোয় এ আগ্রহ বিশেষভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে এক ব্রিফিংয়ে চীনের ভাইস এনভায়রনমেন্ট মিনিস্টার ঝাও ইংমিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিতে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে চলেছি, কিন্তু আমরা অর্থনীতির বিকাশ, জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের মতো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রয়েছি।
আগামী বছর নিঃসরণ অঙ্গীকার পুনরালোচনার সময় সর্বোচ্চ সম্ভাবনা প্রদর্শনের জন্য চলতি বছর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং, যদিও দেশটির কাছ থেকে আরো কঠোর পদক্ষেপের কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। এদিকে গত বছরের শুরুর দিকে ৪২ দশমিক ৯ গিগাওয়াটের নতুন কয়লাচালিত বিদ্যুত্কন্দ্র গড়ে তুলেছে চীন। এছাড়া আরো ১২১ গিগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
এর আগে ২০১৭ সালে ৩৫ গিগাওয়াট ও ২০১৬ সালে ৩৮ গিগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎ সক্ষমতা অর্জন করে চীন।
এখন পর্যন্ত কোনো নিট পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বার্ষিক প্রায় ২০ কোটি টন উৎপাদন সক্ষমতা সম্পন্ন ৪০টি নতুন কয়লা খনির অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এসব খনির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেখানে ২০১৮ সালের পুরো বছরে আড়াই কোটি টনের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
রয়টার্সের হাতে আসা এক সরকারি নথি অনুসারে, ঋণ কমানোর প্রচেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রধান পরিষেবাগুলো তাদের এক-তৃতীয়াংশের বেশি পুরনো ও কম দক্ষ কয়লাচালিত বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে চায়। চারটি সূত্র এ তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে। পরিষেবাগুলো যদি পরিকল্পনা অনুসারে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার কমায়ও, তবু নতুন যে সক্ষমতা যোগ হতে যাচ্ছে, তাতে এ হ্রাস কোনো প্রভাব ফেলবে না।
চলতি বছরের অক্টোবরে চীনের প্রিমিয়ার লি কেকিয়াং পরিবেশবান্ধব খনি ও কয়লাচালিত বিদ্যুতের প্রচারণার জন্য জ্বালানি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এছাড়া চীনের ২০২১-২৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় কার্বন ডাই-অক্সাইড ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের প্রস্তাবনা যুক্ত হওয়ার