মাসের পর মাস বেতন-ভাতা না পাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীরা করছেন ভুখা মিছিল। আর ওদিকে খুলনা-যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলের গুদামে মজুদ আছে ৩০ হাজার ৪৬২ টন পাটপণ্য, যার বাজারমূল্য ২৭০ কোটি টাকা। অর্থ জোগাড় করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনকে (বিজেএমসি) অবশেষে ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ অর্থ আগস্ট-নভেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় করা হবে।
বিজেএমসি খুলনা অঞ্চলের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মো. বনিজ উদ্দিন মিয়া জানান, বর্তমানে খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৮ হাজার ১৩০ টন, প্লাটিনাম জুট মিলে ৬ হাজার ১১৭ টন, খালিশপুর জুট মিলে ৬ হাজার ৫৯৪ টন ও দৌলতপুর জুট মিলে ৯৭৮ টন, দিঘলিয়া শিল্পাঞ্চলের স্টার জুট মিলে ১ হাজার ১১৬ টন, আটরা শিল্পাঞ্চলের আলিম জুট মিলে ১ হাজার ৪৭৪ টন ও ইস্টার্ন জুট মিলে ২ হাজার ৫৭ টন, যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলের যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিতে (জেজেআই) ৩ হাজার ৩৯৬ টন ও কার্পেটিং জুট মিলে ৬০০ টন পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সুদানে রফতানি বন্ধ থাকার কারণে মজুদে এ পরিমাণ স্থিতি রয়েছে। স্থানীয় বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে তবুও মজুদ কিছুটা কমেছে। কার্যকরী মূলধন না থাকায় কাঁচা পাটের মজুদ নেই। ফলে উৎপাদনও কমেছে। মিলগুলোয় উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন হচ্ছে।
এদিকে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল শ্রমিকের ১০ থেকে ১১ সপ্তাহের মজুরি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চার মাসের বেতন বাবদ ৫৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৪৪ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে।
খুলনার শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকদের এত পরিমাণ বকেয়াসহ সার্বিক সংকটাপন্ন অবস্থা সম্পর্কে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, শ্রম সচিবকে অবহিত করা হয়েছে। বিজেএমসির কোনো তহবিল না থাকায় বকেয়া পরিশোধে উদ্বেগ রয়েছে। মজুদ পাটপণ্য বিক্রি না হওয়ার ফলে এ সংকট আরো বেড়েছে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আব্দুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনা অঞ্চলের নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা ২৫ নভেম্বর ভুখা মিছিল করেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি সুইপাররাও পে-কমিশনের আওতায় বেতন পাচ্ছেন অথচ শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে টালবাহানা চলছে।
বকেয়া বেতন-ভাতার পাশাপাশি ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা বলে জানান ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএর সাবেক সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন। খালিশপুর জুট মিলের সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, পাটকল শ্রমিকরা নিয়মিত মজুরি না পেয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ নিত্যদিনের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে প্লাটিনাম জুট মিলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, খুলনা ও যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে পাট ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ নেই, শ্রমিকদের ১০-১১ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় চার মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে, পিএফ বাবদ বাকি ৮৭ কোটি টাকা, গ্র্যাচুইটি বাবদ বাকি ২৩০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া পাটের দেনা ১৮৬ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে প্রায় ৭২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এত টাকা বকেয়া থাকলে শ্রমিকরা চলবেন কী করে!