রেকর্ড গম উৎপাদনের পথে ভারত

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকার কারণে কৃষিপণ্য রফতানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে ভারত। কৃষকদের সুরক্ষা দিতে সরকারিভাবে পণ্য কেনায় ধারাবাহিকভাবে মজুদ বাড়ছে। এর মধ্যে আগামী বছর রেকর্ড গম উৎপাদনের পথে রয়েছে দেশটি। দীর্ঘস্থায়ী বর্ষার কারণে বছর গমের আবাদ ফলন প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষিপণ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব হুইট অ্যান্ড বার্লি রিসার্চের পরিচালক জ্ঞানেন্দ্র সিং জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার গমের আবাদ ফলন বেড়ে যাবে। নিশ্চিতভাবে আমরা এবার গত বছরের রেকর্ড ভাঙব।

কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে টানা দ্বিতীয় মৌসুমের মতো ভারতে রেকর্ড পরিমাণ গম উৎপাদন হতে যাচ্ছে। কারণ বছরের বর্ষাকালে ২৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। জমিতে যথেষ্ট রস আছে। ফলে কৃষকরা বেশি করে গম আবাদে উৎসাহিত হবেন।

কিন্তু অতিরিক্ত উৎপাদন ভারতের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরই মধ্যে যেভাবে মজুদ বেড়েছে, তাতে গমে দ্বিতীয় শীর্ষ উৎপাদক দেশটি কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি শস্য কিনতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি রফতানি বাজার ধরে রাখতে ভর্তুকি কর্মসূচিও অব্যাহত রাখতে হবে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর গম উৎপাদন হয়েছে ১০ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার টন। বছর বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) গড়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাছাড়া এবার অক্টোবর-নভেম্বরেও বেশ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে গম বপনের উপযুক্ত জমির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

বিশেষ করে গম আবাদের প্রধান দুই রাজ্য পাঞ্জাব হরিয়ানায় গত সপ্তাহেও বৃষ্টি হয়েছে। পাঞ্জাবে এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ বা প্রায় ৩৫ লাখ হেক্টর এবং হরিয়ানায় ১৮ দশমিক শূন্য লাখ হেক্টর জমিতে গম বোনা হয়ে গেছে। উত্তর প্রদেশেও কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে, ফলে রাজ্যেও এবার গমের আবাদ ফলন ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

তাছাড়া ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তাপমাত্রা অনেক নেমে যেতে পারে। এতে অত্যন্ত তাপমাত্রা সংবেদনশীল ফসল গমের ফলন অনেক বেড়ে যাবে বলে ধরে নেয়া যায়।

এদিকে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের প্রধান জলাধারগুলোয় ধারণক্ষমতার ৮৬ শতাংশ পানি জমেছে, যেখানে ১০ বছরের গড় ৬৪ শতাংশ। ফলে গম ক্ষেতে সেচের পানির সংকট এবার হবে না। তাছাড়া অক্টোবরের শেষ নাগাদ থেকে বপন শুরু করে মার্চে সংগ্রহ করা যায়, ভারতে রকম মাত্র একটি ফসল গম।

মুম্বাইয়ে ইন্ডিট্রেড ডেরিভেটিভস অ্যান্ড কমোডিটিসের প্রধান হরিশ গালিপেল্লি বলেন, সরকার কিনছে বলে ভারতে খাদ্যশস্যের মধ্যে একমাত্র গমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে কৃষকরা ফসলে বেশি ভরসা পাচ্ছেন।

কিন্তু বর্ধিত উৎপাদন ভারতের জন্য মধুর সংকট হয়ে আবির্ভূত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বেশি দামের কারণে আগামীতে গম রফতানি করা কঠিন হবে।

কৃষকদের সুরক্ষায় কৃষিপণ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়েছে ভারত সরকার। পাঁচ বছরের মধ্যে এটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে আন্তর্জাতিক কৃষিপণ্যের বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাতে বসেছে ভারত।

বর্তমান এমএসপিতে গমের রফতানিমূল্য দাঁড়াবে প্রতি টন ৩০০ ডলার, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো ২৫০ ডলারের নিচে গম রফতানি করছে। মুম্বাইভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী বলেন, ভারত ১০০ মিলিয়ন টনের বেশি গম উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু সরকার যথেষ্ট ভর্তুকি না দিলে এক মিলিয়ন টনও রফতানি করা সম্ভব হবে না।

৩১ মার্চ সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত লাখ ২৬ হাজার ২২৫

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন