গত নভেম্বরে ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ভেনিস। ছোট ছোট নদী, খাল, নৌকা, ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন ঘরবাড়ির জন্য বিখ্যাত এ ইতালীয় শহরটির পরিণতি ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও নীতিনির্ধারকদের। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত পর্যটক আগমনে ধুঁকছে ইতালির এ শহর। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের কাছে ভেনিস আকর্ষণীয় মনে হলেও প্রতি বছর হাজারো স্থানীয় মানুষ সেখান থেকে অন্যত্র আবাস গড়ছে
শতাধিক ছোট ছোট দ্বীপে বিভক্ত এ শহরটিতে চলতি বছরই প্রায় তিন কোটি পর্যটক এসেছেন। অতিরিক্ত পর্যটক আগমনের ফলে সম্পদ ও অবকাঠামোর ওপর চাপ পড়লেও তা স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গায় তেমন ভূমিকা রাখছে না। কনফার্টিগিয়ানতো ভেনেজিয়া নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী জোটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পর্যটকই মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য সেখানে অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন স্মারক পণ্য কিনতে গড়ে মাত্র ১৩ ইউরো খরচ করেন।
স্থানীয় কারিগররা সস্তা বিদেশী পণ্যের সঙ্গে টিকতে পারছেন না। আবাসন খাতে উল্লম্ফনের জেরে যে উচ্চ দোকান ভাড়া দিতে হয়, তা তাদের ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শহরটির ঐতিহাসিক স্পটগুলোয় দক্ষ কারিগরের সংখ্যা ১৯৭০-এর দশকের পর প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ২০১৮ সালে ১ হাজার ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
কনফার্টিগিয়ানতো ভেনেজিয়ার সদস্য এনরিকো ভেত্তোরি বলেন, কারিগর পরিবারগুলোয় অনেক পরিবর্তন এসেছে। পারিবারিক পেশায় থাকার জন্য অনেক পরিবারেই কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে চাহিদার ঘাটতিও রয়েছে। যেসব পর্যটক কয়েক ঘণ্টা বা একদিনের জন্য ভেনিসে আসেন, তারা স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে বেশি জিনিস কেনেন না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিয়মিত হয়ে দাঁড়ানো বন্যায় শহরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। গত ১২ নভেম্বর ভেনিসের পানির পরিমাণ সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে ১৮৪ সেন্টিমিটার বা ৬ ফুট বেড়েছে। প্রবল স্রোত ও ঘণ্টায় ৭৫ মাইলের শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহে শহরের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষের অনুমান এতে ১০০ কোটি ইউরো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য নগর কর্তৃপক্ষের মতো ভেনিসের মেয়র লুইজি ব্রুগনারোও জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।
বেনেদেত্তো মার্সেলো মিউজিক কনজারভেটরির প্রেসিডেন্ট জিওভান্নি জিয়ল বলেন, আমি এ শহরকে ভালোবাসি। এখানেই আমাদের চার সন্তান বড় হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে শহরটি খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে।
ষোড়শ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত একটি রাজপ্রাসাদে স্থাপিত ওই মিউজিক কনজারভেটরি। গত মাসের ঐতিহাসিক বন্যায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপি ও বই ভিজে গেছে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত আইটেমগুলোকে বোলোগনার একটি সংস্কারকেন্দ্রে (রেস্টোরেশন ফ্যাসিলিটি) পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য বই ও বাদ্যযন্ত্র মিউজিয়ামটির উপরের ফ্লোরগুলোয় শুকাতে দেয়া হয়েছে।
পর্যটকদের আগমন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেনিস থেকে স্থানীয়দের প্রস্থানও বাড়ছে। প্রতি বছর
হাজারখানেক বাসিন্দা ভেনিস ছেড়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ভেনিস লেগুনে বসবাস করছে ৫০ হাজার মানুষ। ১৯২৬ সালে ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভেনিসকে একীভূত করেছিলেন।
দো মোসটোর মতো অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করছেন, নগরটির ইস্যুগুলো এ রকম ব্যতিক্রম যে এর 
