রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুর ডায়নামিকসটি নতুন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগের সামনে আসা শুরু হয়েছে। বিশেষত গত ১১ নভেম্বরের পর থেকে আলোচ্য বিষয়টি তাত্পর্যপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসি সম্মিলিতভাবে জেনেভা, হেগ ও নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করেছে। তারা মিয়ানমারে ঘটে চলা ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে এ ধরনের বর্বরতা প্রতিরোধে দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার ব্যাপকতর করা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জোর দিয়েছে। এটিও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা উচিত। আরো বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া ও চলাচলের স্বাধীনতা সম্পর্কিত আনান অ্যাডভাইজরি কমিটির সুপারিশগুলো রাখাইন রাজ্যে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উচিত।
মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সহপৃষ্ঠপোষকতায় নিউইয়র্কে উত্থাপিত প্রস্তাবেও রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সমতা ও বৈষম্যহীন নীতির ভিত্তিতে দেশটির প্রতিটি নাগরিকের পূর্ণ মানবাধিকার সুরক্ষা এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতের জরুরি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের মতামতেও প্রতিফলিত হয়েছে যে, অধিকতর অস্থিতিশীলতা ও অনিরাপত্তা প্রতিরোধ রোহিঙ্গাদের ভোগান্তির অবসান ঘটাবে, আলোচ্য সংকটের মূল কারণ উন্মোচনে সাহায্য করবে এবং একটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ রচনা করবে।
রোহিঙ্গা সংকটের আইনগত উন্নয়নের বিষয়টিও আন্তর্জাতিক স্পটলাইটে এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত ১৪ নভেম্বর মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ওপর একটি তদন্ত প্রক্রিয়া উন্মোচনে কৌঁসুলিদের অনুমোদন দিয়েছেন। স্মর্তব্য, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশন গত সেপ্টেম্বরে প্রতিবেদন দিয়েছে যে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের বিদ্রোহ দমন অভিযানের কারণে—যেটিকে তারা গণহত্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে—৭ লাখ ৪০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল।
আইনজীবী ফাতৌ বেনসৌদার তদন্তের আবেদন খতিয়ে দেখা বিচারকদের প্যানেল সিদ্ধান্ত টেনে বলেছেন যে, ব্যাপকতর সহিংসতা ছড়ানোর ভিত্তি আছে—যেটি মানবতাবিরোধী অপরাধ, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে তাদের নির্বাসনে বাধ্য করা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জাতীয়তা পরিচয় কিংবা ধর্মের অধিকার ক্ষুণ্নের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এই আইসিসির সিদ্ধান্তকে মিয়ানমারে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বরতা চালানোর মূল হোতাদের একটি দৃঢ় বার্তা পাঠানো হচ্ছে যে তাদের দায়মুক্তির দিন শেষ।
এক্ষেত্রে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক নিকোলাস বেকুলিনের মন্তব্য উল্লেখ করা জরুরি। তিনি বলেছেন, আজকের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানালেও এটি মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর করা অনেক অপরাধের মধ্যে কেবল কিছু অপরাধের তদন্তের সুযোগ দেবে আইসিসিকে। এজন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দেশটির পুরো পরিস্থিতি আইসিসির কাছে রেফার করা অত্যাবশ্যক থেকে যায়। এ দায়িত্ব পালনে আলোচ্য পরিষদের চলমান ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির