দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নয়নশীল, উদীয়মান ও অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করলে বোধকরি অত্যুক্তি করা হবে না। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি হলো, সে দেশের রাজস্ব আয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায় অভ্যন্তরীণ শুল্ককর ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বৃদ্ধি পেলে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় বেসরকারি মূলধন ও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়লে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম পন্থা হলো, বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি এবং দেশের ভেতরে ও বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখ লাখ কোটি কালো টাকাকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা।
অভ্যন্তরীণ কর-রাজস্ব বৃদ্ধি
বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে প্রতি বছর শুল্ক-কর রাজস্বের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে যে রাজস্ব আহরণ করা হয়, তা প্রাক্কলন থেকে নিচে থেকে যায়। গত জুলাই ও আগস্টে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক-করের প্রাক্কলিত অংকের চেয়ে প্রকৃত আদায় ৯ হাজার কোটি টাকা কম হয়েছে। দুই মাসে ঘাটতির পরিমাণ দেখে মনে হয় বছর শেষে বিরাট অংকের রাজস্ব ঘাটতি হবে। এর কারণ কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায় পদ্ধতি ও প্রচেষ্টায় দক্ষতার অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশে কর-রাজস্ব ও জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে কম। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, কয়েকটি দেশের ২০১৭ সালের কর-রাজস্ব ও জিডিপির অনুপাত নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
বাংলাদেশ ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ভুটান ১২ শতাংশ, নেপাল ২৩ দশমিক ১ শতাংশ, ভারত ১১ দশমিক ২ শতাংশ, থাইল্যান্ড ১৭ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১৩ দশমিক ১ শতাংশ, শ্রীলংকা ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে ২০১৭ সালের কর-রাজস্ব ও জিডিপির গড় অনুপাত নিম্নরূপ ছিল:
উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ ১২ শতাংশ, মধ্যম আয়ের দেশ ১২ শতাংশ, নিম্নতম উন্নত দেশ (এলডিসি) ১০ দশমিক ৪ শতাংশ উপরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে লক্ষ করা যায় যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কর-রাজস্ব ও জিডিপির অনুপাত সবচেয়ে কম ছিল। এখনো যে এর খুব উন্নতি হয়েছে তা বলা যায় না। দুঃখজনক হলেও এটা সত্য, বাংলাদেশের করযোগ্য নাগরিক ও সংস্থাগুলো অকল্পনীয়ভাবে কর ফাঁকি দিচ্ছে, যেজন্য জিডিপি ও কর-রাজস্বের অনুপাত এত নিচে নেমে গেছে। জাতীয় বাজেটের প্রাক্কলিত কর-রাজস্ব পুরোপুরি আদায়ের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী করজাল বিস্তারের জন্য প্রতিটি উপজেলায় কর অফিস স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কয়েক মাস গত হলেও এর বাস্তবায়ন লক্ষ করা যাচ্ছে