দেশের প্রথম ও বৃহত্তম ‘ফোর
টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার’ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের
মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের এ
ডাটা সেন্টারের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন,
ডাটা সংরক্ষণে আর বিদেশনির্ভরতা নয়। এ সময়
গণভবনে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ
পলক এবং ডাটা সেন্টার প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর লতিফুল কবির।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃহৎ
এ ডাটা সেন্টারের কল্যাণে শুধু দেশের অর্থের সাশ্রয় নয়; এখান
থেকে অর্থ আয় করা সম্ভব হবে। ডাটা সেন্টারটি স্থাপন ও উন্মোচনের মাধ্যমে আমরা
ডিজিটাল বাংলাদেশের আরো একটি ধাপে উন্নীত হলাম। এরই মধ্যে আমরা বঙ্গবন্ধু
স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করেছি।
দেশের প্রথম ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে
উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ডাটা
সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম,
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী
পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব এবং বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান
নির্বাহী মো. মোকাব্বির হোসেন। এ সময় ডাটা সেন্টারটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জিটিই করপোরেশন
বাংলাদেশ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ভিনসেন্ট লুই, গভর্নমেন্ট
এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চেন উই ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
চীনের শেনঝেনভিত্তিক প্রযুক্তি
প্রতিষ্ঠান জিটিই করপোরেশনের দায়িত্বে নির্মিত হয়েছে পার্ক ও ভবন, ডাটা
সেন্টার ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার
(ডিসিপিআই),
আইটি সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এবং ফোর টায়ার
ডাটা সেন্টারের ওঅ্যান্ডএম সার্ভিস। এ প্রকল্পের মূল অংশ হিসেবে ডিসিপিআই নকশা ও
নির্মাণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আপটাইম ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, যার
রিলায়েবিলিটি লেভেল ৯৯ দশমিক ৯৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডাটা
সেন্টারটি নির্মাণ করা রয়েছে অত্যাধুনিক শক-প্রুফ, ফ্লাড-প্রুফ এবং এক্সপ্লোশন-প্রুফ ডিজাইনে।
বাংলাদেশে একটি টায়ার থ্রি ডাটা
সেন্টার থাকলেও এর ধারণক্ষমতা এরই মধ্যে পূর্ণ হয়েছে। যে কারণে হাই-টেক পার্কে
জিটিইর মাধ্যমে টায়ার ফোর ডাটা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ডাটা সেন্টারটির
ধারণক্ষমতা দুই পেটাবাইট। এক পেটাবাইট ১০ লাখ গিগাবাইটের সমতুল্য। আপটাইম
ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর সনদপ্রাপ্ত এ ডাটা সেন্টারটি মিশন ক্রিটিক্যাল অপারেশনে
সহায়তা প্রদানে সর্বোচ্চ পরিমাণে অ্যাভেইলেবিলিটি ও রিসাইলেন্স রয়েছে। এটা দেশের
প্রথম জাতীয় ডাটা সেন্টার, যার আপটাইম টায়ার ফোর ডিজাইন সার্টিফিকেশন ও ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন
রয়েছে এবং ডাটা সেন্টার আপটাইম টায়ার ফোর ফ্যাসিলিটি সার্টিফিকেশন পাওয়া দক্ষিণ
এশিয়ার প্রথম ডাটা সেন্টার এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ টায়ার ফোর ন্যাশনাল ডাটা
সেন্টার।
বিবৃতিতে জিটিই জানায়, বাংলাদেশের
প্রথম টায়ার ফোর ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার নির্মাণে সফলতার জন্য তারা সিঙ্গাপুরে
অনুষ্ঠিত ‘ডিসিডি এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাওয়্যার্ডস ২০১৯’-এ ‘টিম
অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছে।
ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার নিয়ে
জিটিই করপোরেশন বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ভিনসেন্ট
লুই বলেন, ‘তথ্য সংরক্ষণ, সুরক্ষা ও শেয়ারিংয়ের পাশাপাশি অনেক প্রযুক্তি সহজে ব্যবহারযোগ্য করে
তোলার ক্ষেত্রে নতুন ডাটা সেন্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটা ডিজিটাল
বাংলাদেশ বিনির্মাণের কেন্দ্রস্থল বলে বিবেচিত হবে। আপটাইম ইনস্টিটিউটের টায়ার ফোর
স্ট্যান্ডার্ড মেনে এ ডাটা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে বিবেচনা করা হয়েছে
এর নকশা, নির্মাণ, কার্যক্রম ও রক্ষণাবেক্ষণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রার অংশ হতে পেরে
আমরা গর্বিত।’
জিটিই করপোরেশন বাংলাদেশের গভর্নমেন্ট
এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চেন উই বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ খাতের উন্নয়নে
এরই মধ্যে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জাতীয় ডাটা সেন্টার অত্যন্ত
কার্যকরী উদ্যোগ। এ ডাটা সেন্টার বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি
খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আমার বিশ্বাস।’
উল্লেখ্য, ২০১৫
সালের ৬ অক্টোবর ফোর টায়ার ডাটা সেন্টার নির্মাণে একনেকে প্রকল্প পাস হয়। ২০১৬
সালের ১৪ অক্টোবর সরকারি অর্থে ও চীনের কারিগরি সহায়তায় নির্মিত দুই লাখ বর্গফুটের
ভূমিকম্প সহনীয় ও এক্সপ্লোসিভ সহনীয় ডাটা সেন্টারটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
গত বছর জুনে কাজ শেষ করার মেয়াদ ধরা হলেও তা কিছুটা সময় পিছিয়ে শেষ হয়।