ক্ষমতার জন্য ভ্রাতৃহত্যা ও অন্যান্য

ইবনে মোতালিব

রোমান সম্রাট সেপটিমিয়াস সেভেরাম ২১১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে মারা গেলেন। তার দুই ক্ষমতালোভী পুত্রদ্বয়কে সামাল দিতে দুজনকে যুগ্ম সম্রাট ঘোষণা করা হলো। ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে দুজনের লোভ আরো বেড়ে গেল। দুজনেরই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চাই, নতুবা শাসনের পুরো আনন্দ মিলছে না। বড় ছেলে গেটা ছোট ছেলে কারাকাল্লা শাসক হিসেবে দুজনই অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। পূর্ণ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য দুজনই পরস্পরকে হটানোর ষড়যন্ত্র এবং কৌশল নিয়ে মেতে রইলেন।

কারাকাল্লা বড় ভাইকে একটি সমঝোতার প্রস্তাব দিয়ে মায়ের সামনে আলোচনার আয়োজন করলেন। মায়ের কাছে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে যাওয়া ঠিক হবে না মনে করে গেটা খালি হাতে ঢুকলেন। অমনি কারাকাল্লার অনুগত সেঞ্চুরিয়ানদের একটি দল তার ওপর আক্রমণ চালায়, মা জুলিয়া ডোমনার হাতের উপরে কারাকাল্লার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২১১ খ্রিস্টাব্দ।

সম্রাট কারাকাল্লা নিজেও ক্ষমতালোভী ম্যাক্রিনাসের ষড়যন্ত্রে ২১৭ সালের এপ্রিল মার্শিয়ালিজ নামের একজন সৈন্যের হাতে নিহত হন।

অটোমান সম্রাট তৃতীয় সুলতান মাহমুদ ক্ষমতায় আরোহণ এবং ক্ষমতা নিরুপদ্রব রাখার জন্য ১৯ জন আপন সৎ ভাইকে হত্যা করেন। সুলতান সোলায়মান ছিলেন তার প্রপিতামহ। যে বছর তার জন্ম, সে বছর সুলতান সোলায়মান মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তী সম্রাট সুলতান দ্বিতীয় সেলিম তার পিতামহ। তার বয়স যখন আট বছর, তখন পিতামহের মৃত্যু হলে তার পিতা তৃতীয় মুরাদ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন। ২৮ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর তিনি ক্ষমতারোহণ করলেও আলস্যের কারণে তিনি রাজকার্যে তেমন অংশ নিতেন না। তার মা সাফিই সুলতান রাজকার্যের অনেকটা দেখভাল করতেন। অলস হলেও তার বিরুদ্ধে কোথায়, কী ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সে ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। তার নিজস্ব বাহিনীর মূক বধির সদস্যদের দিয়ে ১৯ জন ভাইকে হত্যা করিয়ে নিজের সিংহাসন সুরক্ষিত রাখেন। ১৬০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের ছেলের মৃত্যুজনিত শোকে ভেঙে পড়া অবস্থায় তিনি হূদরোগে আক্রান্ত হন অথবা প্লেগে মৃত্যুবরণ করেন বলে মনে করা হয়।

ক্ষমতার জন্য ভ্রাতৃহত্যা এত বেশি ঘটেছে যে এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে আর তেমন অস্বাভাবিক ব্যাপার মনে হয় না। অটোমান বা উসমানিয়া রাজত্বে ভ্রাতৃহত্যাকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। অবশ্য ভ্রাতৃহত্যার চর্চা শুরু হয়েছিল আরো আগে।

বাইবেলের বুক অব জেনেসিস- আছে আদম ইভের দুই সন্তান আবেল কিয়নের কাহিনী। নারীর গর্ভজাত প্রথম সন্তান কিয়ন (কাবিল) ছিলেন একজন কৃষিজীবী আর তার ভাই আবেল (হাবিল) ছিলেন মেষপালক। দুই ভাইয়ের প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের উৎপাদন স্রষ্টার জন্য নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করলে স্রষ্টা আবেলের নৈবেদ্য গ্রহণ করেন। কিয়নের নৈবদ্য গ্রহণ না করায় সে প্রত্যাখ্যাত বোধ করল। বিষণ্ন হয়ে পড়ল। কিয়ন ভাই আবেলকে বলল, ‘চল, মাঠে যাই।যখন মাঠে পৌঁছল কিয়ন তার ভাইকে হত্যা করল। ঈশ্বর হত্যাকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার ভাই আবেল কোথায়?’

কিয়নের জবাব, ‘আমি জানি না, আমি কী আমার ভাইয়ের রক্ষক নাকি?’

ঈশ্বর বললেন, ‘তুমি কী করেছ? কেন তোমার ভাইয়ের রক্ত মাটি থেকে কেঁদে উঠছে? যে মাটি তোমার ভাইয়ের রক্ত হা করে শুষে নিয়েছে, সে মাটির অভিশাপ তোমার ওপর বর্ষিত হচ্ছে। এখনো যদি তুমি মাটি চাষ করো, তোমাকে সে শক্তি জোগাবে না, তুমি অস্থির পথচারীর মতো পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে।

কিয়ন ঈশ্বরকে বলল, ‘

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন