ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রথম রায়

ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছরের কারাদণ্ড ও ১৫ লাখ টাকা জরিমানা

আদালত প্রতিবেদক

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি থানায় অভিযোগ করতে গেলে তার বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে তাকে ১৫ লাখ টাকার অর্থদণ্ডও দেয়া হয়েছে; অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাভোগ করতে হবে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তাকে।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় এটিই প্রথম রায়।

রায়ে বিচারক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং ২৯ ধারার বিধান মোতাবেক তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। 

এর আগে গত ২০ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন। এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

এর আগে গেল ১৭ জুলাই বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ১৭ জুন আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ২৭ মে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলায় নুসরাতের বক্তব্য গ্রহণের সময় তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।

ভিডিওতে দেখা যায়, অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত জাহান রাফি, সেই কান্নার ভিডিও করছেন সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম। নুসরাত তার মুখ দুই হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। এতে আপত্তি জানিয়ে মোয়াজ্জেম বারবার বারবার বলেন, ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’। এমনকি ‘এমন কিছু হয়নি যার জন্য তোমাকে কাঁদতে হবে’ বলতেও শোনা যায়।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় নুসরাতকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নও করতে শোনা যায় মোয়াজ্জেমকে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে কৌশলে মাদরাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গেল ২৪ অক্টোবর অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন