প্রাকৃতিক গ্যাস

বৈশ্বিক সরবরাহ বৃদ্ধিতে সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে। এর বিপরীতে চাহিদা কমছে চীনসহ অন্যান্য দেশে। ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন উত্তরোত্তর বাড়লেও চাহিদা কমায় সংকটের মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকরা। আগামী বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। খবর ব্লুমবার্গ।

আমেরিকার বিনিয়োগবিষয়ক ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান সিটিগ্রুপের এক নোটে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমে যাবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহারও কমে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে।

একই তথ্য জানিয়েছে আমেরিকার আরেক বহুজাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলিও। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকায় আগামী বছরের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমে যেতে পারে। এতে আমেরিকার উৎপাদকদের দৈনিক ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে, যা বর্তমানে দেশটির দৈনিক রফতানি হওয়া গ্যাসের অর্ধেকের সমান।

জ্বালানি ও পণ্যবিষয়ক তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের বৈশ্বিক গ্যাস ও এলএনজিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক মেডিলিন জাওডি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে চীনের চাহিদা কমে যাওয়ায়। তিনি জানান, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজির) শীর্ষ ভোক্তা দেশ চীন আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপের গ্যাস ট্যাংকারগুলোয় পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ফলে ভালো দাম পেতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য বাজার খুঁজতে হচ্ছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ায় এসব গ্যাসে ক্ষতিকর উপাদানের মিশ্রণ বাড়ছে। ফলে নিম্নমানের গ্যাস দিয়ে বাজার ধরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে।

মেডিলিন জাওডি আরো জানান, আগামী

বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় হতে পারে। কারণ এ সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক চাহিদা সবচেয়ে কম থাকবে। ফলে নতুন রফতানি টার্মিনাল চালু হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন ও রফতানি কমিয়ে দিতে হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি ক্রয় করা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে আমদানি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ দেশটি থেকে এলএনজি ক্রয় করে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি করে। কিন্তু এলএনজির দাম কমে যাওয়ায় জাহাজীকরণ খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হচ্ছে না তারা। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজির ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে বাণিজ্যিক এসব প্রতিষ্ঠান। পক্ষান্তরে চাহিদা না থাকায় এলএনজির সরবরাহ ও উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের কাছে আর বিকল্প পথ থাকছে না। তাছাড়া এরই মধ্যে দেশটির স্টোরেজ ট্যাংকগুলোয়ও পর্যাপ্ত মজুদের কারণে উৎপাদন কমিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদকরা।

এদিকে আমেরিকা থেকে এলএনজি আমদানিকারকদের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। তবে ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নোটিস দিয়ে আবার চুক্তি বাতিল করতে পারেন ক্রেতারা। যেখানে কাতার ও অস্ট্রেলিয়া থেকে এলএনজি ক্রয়ের চুক্তি হলে ক্রয় হোক আর না হোক, বাধ্যতামূলক ফি দিতে হয়। আর এ সুযোগেই যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতা তাদের এলএনজি ক্রয়ের চুক্তি বাতিল করেছেন।

এমন একটি প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের প্যাভিলিয়ন এনার্জি। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি ক্রয় চুক্তি বাতিল করেছে। তবে প্যাভিলিয়নের পথ ধরে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি ক্রয়ের চুক্তি বাতিল করতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন