নিজেদের পোর্টফোলিওগুলোকে প্যারিস
সম্মেলনে গৃহীত জলবায়ু লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্বের বৃহৎ
বিনিয়োগ তহবিলগুলো। গতকাল এক নতুন বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের ৩৭
ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে এ তহবিলগুলো। খবর এএফপি।
ব্রিটেনভিত্তিক থিংক ট্যাংক
ইনফ্লুয়েন্সম্যাপ জানায়, বৈশ্বিক মূলধন বাজারগুলোর মোট মূল্যের এক-পঞ্চমাংশ এ
তহবিলগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন পোর্টফোলিওর অন্তর্গত। তা সত্ত্বেও গাড়ি ও কয়লার মতো
খাতগুলোয় বিনিয়োগ তহবিলগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্যারিস চুক্তির বিপরীতে ঠেলে
দিচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২
ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা ১৫০টি আর্থিক জায়ান্টের
নিয়ন্ত্রণাধীন ৫০ হাজার তালিকাভুক্ত তহবিল বিশ্লেষণ করেছেন। তাতে দেখা গেছে তেল ও
গ্যাস, কয়লা খনি, গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং ও বৈদ্যুতিক শক্তি খাতে তহবিলগুলোর হোল্ডিংয়ের
পরিমাণ ৮ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার।
ইনফ্লুয়েন্সম্যাপ জানিয়েছে, এসব
খাতের মধ্যে তহবিলগুলো যেসব কোম্পানি তথাকথিত ‘ব্রাউন টেকনোলজিসে’র সম্প্রসারণ
ঘটাচ্ছে, সেগুলোয় বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। এছাড়া নবায়নযোগ্য ও অন্যান্য
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে তহবিলগুলোর বিনিয়োগ তুলনামূলক অনেক কম দেখা গেছে। থিংক
ট্যাংকটি জানিয়েছে, এসব খাতের সিংহভাগ কোম্পানিই প্যারিস লক্ষ্য পূরণে নিজেদের ব্যবসায়িক
মডেলে পরিবর্তন আনার বিষয় থেকে অনেক অনেক দূরে রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী একটি আন্দোলন
তৈরি হয়েছে, যেখানে শেয়ারহোল্ডাররা নিজেদের কোম্পানিগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি
ব্যবহার ও অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বন্ধের আহ্বান জানাতে শুরু করেছে। জলবায়ু
আন্দোলনকারী সংস্থা ৩৫০ডটওআরজির তথ্যানুসারে,
এরই মধ্যে ১১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ তুলে নেয়ার
প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
তবে শিল্পে এ আন্দোলনের তীব্র
প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে। পেনশন ও সার্বভৌম সম্পদ তহবিলগুলো নিজেদের
পোর্টফোলিওভুক্ত কোম্পানিগুলোয় শেয়ারহোল্ডারদের চ্যালেঞ্জকৃত জ্বীবাশ্ম বিনিয়োগ
কমিয়ে ফেলতে চাইছে।
ইনফ্লুয়েন্সম্যাপের নির্বাহী পরিচালক
ডিলান ট্যানার বলেন, গত এক দশকে টেকসই অর্থায়ন বড় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, যা
শক্তিশালী সরকারি পদক্ষেপের ঘাটতির মধ্যে প্রকৃত অর্থনীতির উন্নয়নের চালিকাশক্তি
হয়ে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, আর্থিক খাত যদি প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার
বৃহত্তর উদাহরণ তৈরি করে, তবে তাদের পোর্টফোলিওগুলোকেও এ লক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে।
গাড়ি খাতে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিয়ে
প্রাতিষ্ঠানিক অনীহা ও বাস্তবধর্মী লবিং কৌশলগুলো অগ্রগতি আটকে রেখেছে বলে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০১৮ সালে গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী ৯ কোটি
৬০ লাখ গাড়ি উৎপাদন করেছে। কিন্তু এর মধ্যে কেবল ১ দশমিক ৪ শতাংশ গাড়ি
বিদ্যুত্চালিত (ইভি)।
ট্যানার বলেন, বৈদ্যুতিক
গাড়িতে খাতটির বিনিয়োগ অত্যন্ত অপ্রতুল। এছাড়া গাড়ির বহরের আকার দিন দিন যেভাবে বড়
হচ্ছে, তাতে অভ্যন্তরীণ কম্বাশ্চন ইঞ্জিন ইভির যেকোনো সুবিধাকে ছাপিয়ে যাবে।
গত বছর ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন
ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) দেড় ডিগ্রি ও দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের পার্থক্য নিয়ে নিজেদের
একটি মূল্যায়নে ২০৩০ সাল নাগাদ কয়লার বিলোপ ঘটবে বলে জানায়।
এদিকে ইনফ্লুয়েন্সম্যাপের বিশ্লেষণকৃত
তহবিলগুলোকে বর্তমানে প্যারিস লক্ষ্যের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি কয়লা উৎপাদনের
সঙ্গে জড়িত থাকতে দেখা গেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নীতিমালা বিলম্বিত করা নিয়ে কয়লা
শিল্পের আগ্রাসী লবির কারণে আইপিসিসির নির্ধারিত ২০৩০ সালের মেয়াদের মধ্যে কয়লার
ব্যবহার বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।