হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা

রায়ে সন্তুষ্ট নিহত পুলিশ কমিশনার রবিউলের মা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ

গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা মামলার রায়ে আট আসামির সাতজনকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছে আদালত। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঘটনার সময় নিহত  গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিমের মা করিমুন নেছা।

বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় দিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তিনি এই মামলায় খালাস পেয়েছেন।

রায় ঘোষণার সময় বণিক বার্তার এই প্রতিবেদক অবস্থান করছিলেন নিহত রবিউল করিমের মানিকগঞ্জের বাসভবনে। রায় ঘোষণার খবর শুনে তার করিমুন নেছা কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

আবেগআপ্লুত কমিমুন নেছা বলেন, আমি তো আর আমার সন্তানকে ফিরে পাবো না। দীর্ঘ তিনটি বছর এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে যে রায় হলো এতে আমি সন্তুষ্ট। 

এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সন্তানই ছিল আমার একমাত্র মাথার ছায়া। তাকে হত্যা করার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’

বিপদের সময় রবিউলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান করিমুন নেছা। তিনি বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনকে আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। কারণ আমাদের বিপদের সময় তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশীসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ জঙ্গির সবাই মারা পড়েন। তারা হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

২০১৬ সালের ৪ জুলাই নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে এ মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মেট্রোপলিটন হাকিম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করেন, যাদের মধ্যে ১৩ জন মামলা তদন্ত চলাকালীন বিভিন্ন সময় মারা যান। ওই বছরের ২৬ জুলাই সিএমএম আদালত মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন।

এ হামলায় বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা ওই ঘটনায় তার জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন। এছাড়া চার্জশিটে অভিযুক্ত অপর ১৩ জন মৃত্যুবরণ করায় তাদেরও অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। চার্জশিটটি ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের (সংশোধনী ২০০৩) ৬(২)/৭/৮/৯/১০/১২/১৩ ধারায় দাখিল করা হয়েছে। এ ধারায় অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটভুক্ত আটজন আসামি হলেন হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। আসামিদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ পলাতক এবং অপর ৬ আসামি কারাগারে রয়েছেন।

কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ ও রাকিবুল হাসান রিগ্যান হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্রে থাকা ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে মোট ১১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন