লেবাননের আন্দোলনে শক্তি জোগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

লেবাননের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এরই মধ্যে পাঁচ সপ্তাহ অতিক্রম করেছে। কয়েক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা দেশটির দুর্নীতিগ্রস্ত উপদলীয় রাজনীতিবিদদের (সেক্টেরিয়ান পলিটিশিয়ান) অপসারণ চায় বিক্ষোভকারীরা। চলমান বিক্ষোভে শক্তি জোগাচ্ছেন দেশটির দেশে ও বিদেশে থাকা ব্যবসায়ীরা।

পশ্চিম এশিয়ার দেশটির অর্থনীতিতে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলার (সাড়ে ৪০০ কোটি পাউন্ড)

এদিকে মধ্য-অক্টোবর থেকে হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস কলের ওপর প্রস্তাবিত একটি করের প্রতিবাদে শুরু হওয়া লেবাননের সরকারবিরোধী আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যেও সাড়া জাগিয়েছে। চলমান আন্দোলন সম্পর্কে লন্ডনস্থ প্রবাসী ব্যবসায়ী ড্যানা ত্রোমিটার বলেন, আমি মনে করি আমাদের তরুণরা রীতিমতো বিপ্লব করেছে। তবে রাজনীতিসচেতন এ ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত গৃহযুদ্ধসম্পর্কে আমি সচেতন। ১৯৭৫-১৯৯০ সালের গৃহযুদ্ধের কথা আমি ভুলিনি। তবে এবারের পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন না তিনি। তিনি বলেন, এবার যারা বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নেমেছে, তারা আন্দোলন গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত টেনে নেবে বলে মনে হয় না। এছাড়া এখন সেই পরিস্থিতিও নেই। প্রসঙ্গত, হোয়াটসঅ্যাপের ওপর প্রস্তাবিত করকে কেন্দ্র করে শুরু হলেও চলমান বিক্ষোভে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, বেকারত্ব ও দুর্বল সরকারি সেবার মতো বিষয়গুলোও যুক্ত হয়েছে।

লেবাননের রাজনীতি বেশ জটিল। দেশটির শিয়া, সুন্নি মুসলমান ও ম্যারোনাইট ক্রিস্টানরা একটা সমঝোতার মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনা করে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। নিয়ম অনুযায়ী, একজন সুন্নি মুসলমান হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি হন একজন ম্যারোনাইট ক্রিস্টান। স্পিকার হন একজন শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।

চলমান বিক্ষোভ পরিচিত এ উপদলীয় শক্তির প্রভাবমুক্ত হওয়ায় জনগণের মধ্যে তা নিয়ে আশাবাদ বেড়েছে। অন্যদিকে ত্রিশক্তি পালাক্রমে দেশটির ক্ষমতায় থাকায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটি এলিট শ্রেণীর হাতে দেশটির জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সমালোচকরা।

দুর্বল অর্থনীতি ও নিম্ন জীবনযাপনের মান জনগণকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করছে বলে মনে করেন মুহাম্মদ কাউসা নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সাত বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে লেবানন করমুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেয়। এ চুক্তির কথা মাথায় রেখেই আমি ব্যবসা শুরু করি। কাউসা বলেন, ইইউ সঙ্গে আমাদের ওই চুক্তি হতে যাচ্ছে এ রকম একটা সম্ভাবনার জায়গা থেকে আমি ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানির পরিকল্পনা শুরু করি। কিন্তু ইইউর সঙ্গে এখন আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। এর অর্থ হলো, ইইউ থেকে পণ্য আমদানি-রফতানির পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে।

এদিকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ড্যানি হাকিম নামের আরেক ব্যবসায়ী। লেবানন সরকার নিজেদের প্রযুক্তি খাত চাঙ্গা করতে বিদেশ থেকে দক্ষ বিশেষজ্ঞদের আনার একটি সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের সিদ্ধান্ত থাকলেও এর বাস্তবায়নে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে বলে জানান তিনি। হাকিম বলেন, যুক্তরাজ্যে কোনো ব্যবসা শুরু করতে লাগে মাত্র ১০ পাউন্ড। সময় লাগে ২ ঘণ্টা। অন্যদিকে লেবাননে কোনো ব্যবসা শুরু করতে লাগে কয়েক হাজার লেবানিজ পাউন্ড। এছাড়া অনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করতে পেরোতে হয় ১০টি আলাদা ধাপ। এ পরিস্থিতি দেশটির ব্যবসায়িক পরিবেশকে চাঙ্গা করার বদলে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন