বুনো গয়াল বশে এনে সাফল্য

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

গয়াল মূলত তৃণভোজী হওয়ায় গহিন বনের ঝোপঝাড়ের কচি পাতা ও ডালপালা খেয়েই বেঁচে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুনো গয়াল দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের নেতৃত্বে থাকে একটি বড় ও শক্তিশালী ষাঁড়। দেশী গরুর থেকে গয়ালের অন্যতম পার্থক্য হলো এটির শারীরিক গঠন। প্রতিটি গয়ালের গড় ওজন ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ দেশীয় গরুর চেয়ে গয়ালের ওজন প্রায় দ্বিগুণের বেশি

গয়াল, গরুর বিশেষ এক জাত। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ে এর আনাগোনা। অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গরুর অনন্য এ জাতটি দুর্গম পাহাড়ে বসবাস করা নৃগোষ্ঠীগুলোর আমিষের চাহিদা মেটায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমতলে গয়ালের চাহিদা বাড়তে থাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সবৃদ্ধিতেও গয়াল হয়ে উঠেছে নতুন অনুষঙ্গ। সে কারণে অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে বন্য এ গরু লালন-পালনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে খামারি পর্যায়ে গয়াল পালনের মাধ্যমে অনন্য সাফল্য দেখিয়েছেন চট্টগ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামে তিনি গয়াল খামার গড়ে তুলেছেন। 

গয়াল পালনের শুরুটা হয় ২০০৮ সালে। শখের বশে বন্য এ গরু পালন শুরু করলেও ধীরে ধীরে এটি বাণিজ্যিক আকার ধারণ করে। শুরুতে পার্বত্য এলাকার আদিবাসী পরিবারের কাছ থেকে তিনটি গয়াল সংগ্রহ করেন। নিজস্ব পাহাড়ি জমিতে মাচাং তৈরি করেন খামারি। বর্তমানে শতাধিক গয়াল রয়েছে তার খামারে। গয়ালের পাশাপাশি এখন তিনি পাহাড়ি টং গরু ও ভিন্ন ভিন্ন জাতের গরু পালন সম্প্রসারণেও কাজ করছেন।

গয়াল মূলত তৃণভোজী হওয়ায় গহিন বনের ঝোপঝাড়ের কচি পাতা ও ডালপালা খেয়েই বেঁচে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বুনো গয়াল দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের নেতৃত্বে থাকে একটি বড় ও শক্তিশালী ষাঁড়। দেশী গরুর থেকে গয়ালের অন্যতম পার্থক্য হলো এটির শারীরিক গঠন। সাধারণত দেশের বিভিন্ন গরুর গড় ওজন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু ছোট আকৃতির হলেও প্রতিটি গয়ালের গড় ওজন ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ দেশীয় গরুর চেয়ে গয়ালের ওজন প্রায় দ্বিগুণের বেশি। ভালো মানের কম চর্বিযুক্ত মাংসের কারণে প্রতিটি গয়াল সর্বোচ্চ সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি হয়। সাধারণত ১০ থেকে ১১ মাস গর্ভধারণের পর স্ত্রী গয়াল একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। গাভির মতো এদের ওলান না থাকায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশি দুধ পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করা গয়াল ১৫ থেকে ১৬ বছর বেঁচে থাকে। গয়ালের গড়ন ছোট আকৃতির হলেও মসৃণ ও সুঠাম। গয়ালের প্রতিটি পায়ের ১ ফুট পর্যন্ত রঙ বাদামি হয়ে থাকে। তবে দেশীয় জাতের সঙ্গে সংকরায়িত গয়াল সম্পূর্ণ কালো হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন