ট্রাম্পের টুইটের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারে সন্দেহজনক লেনদেন

পুঁজিবাজারের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা কার্যক্রম তার আকস্মিক টুইটের প্রভাব বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রায় সবাই কমবেশি জানেন। তার টুইটের কারণে পুঁজিবাজারে কখনো কখনো দেখা যায় উত্থানপতন। বিনিয়োগকারীদের কেউ কি তার এসব আকস্মিক মন্তব্য বা টুইটকে কোনোভাবে কাজে লাগান? সম্প্রতি বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যানিটি ফেয়ার নামে একটি ম্যাগাজিন।

ভ্যানিটি ফেয়ারের অনুসন্ধানে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের আওতাধীনএসঅ্যান্ডপি -মিনিসেরকিছু শেয়ার ক্রয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। শেয়ারগুলো এমন সময়ে কেনা হয়েছে, যা সন্দেহ করার পক্ষে যথেষ্ট।

চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ দুই দেশের অর্থনীতিকেই ক্রমাগত অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলছে। বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাব্য সমাধানবিষয়ক যেকোনো ইতিবাচক খবরেই মার্কিন পুঁজিবাজারে কিছুটা উত্থান দেখা যায়। ভ্যানিটি ফেয়ার সম্প্রতি তাদের অনুসন্ধানে দেখতে পায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যস্থতা সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বলার ঠিক আগে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের কিছু লেনদেন হয়েছে। ভ্যানিটি ফেয়ার তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইনসাইড নলেজের ভিত্তিতে এসব লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শেষ ১০ মিনিটে এসঅ্যান্ডপি -মিনিস সূচকের ৮২ হাজার শেয়ার কিনেছেন একজন ট্রেডার। অথচ এর আগ পর্যন্ত সারা দিনে লেনদেন হয়েছে সূচকটির হাজার ৯৬৯টি শেয়ার। শেয়ার ক্রয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই চীন সরকার ঘোষণা দেয়, তারা কিছুসংখ্যক মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়াবে। ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে আকস্মিক উত্থান ঘটে। একদিনের মধ্যেই সেই ভাগ্যবান শেয়ার ক্রয়কারী ১৯ কোটি ডলার মুনাফা করে ফেলেন।

একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে চলতি বছরের ২৮ জুন। সেদিন লেনদেনের শেষ ৩০ মিনিটে -মিনিসের লাখ ২০ হাজার শেয়ার কেনে একটি ট্রেডার গ্রুপ। সে সময় ট্রাম্প ছিলেন জি২০ সম্মেলনে। সেদিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটে জানান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়েছে। পরের সপ্তাহেই এসঅ্যান্ডপি সূচক বেড়ে যায় ৮৪ পয়েন্ট। একই সঙ্গে প্রতিটি -মিনি কন্ট্রাক্টের দর বেড়ে যায় গড়ে হাজার ২০০ ডলার। যে গ্রুপটি সে সময় -মিনিসের লাখ ২০ হাজার শেয়ার কিনেছিল তারা প্রায় ১৮০ কোটি ডলার মুনাফা করে।

লেনদেনগুলো কারা করেছেন বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য জানা যায়নি। লেনদেনগুলোর বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনো অনুসন্ধান চালাচ্ছে কিনা তা জানার চেষ্টা করেছে ভ্যানিটি ফেয়ার। কিন্তু বিষয়ে তারা জানতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একজন প্রতিনিধি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কমোডিটি ফিউচারস ট্রেডিং কমিশন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, যে লেনদেনগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, একক কোনো উৎস থেকে সেগুলো সম্পন্ন হয়নি।

ভ্যানিটি ফেয়ারের অনুসন্ধান বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিটের কিছু প্রফেশনালের সঙ্গে কথা বলে ব্লুমবার্গ। তারা জানিয়েছেন, ভ্যানিটি ফেয়ারের সন্দেহ সম্ভবত অতিরঞ্জিত। ইন্ডাস্ট্রি ইনসাইডাররা জানিয়েছেন, ধরনের বড় লেনদেনের ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। মুহূর্তে মার্কেট এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঘটা এসব ঘটনাকে কাকতালীয় হিসেবেই ধরে নিতে হবে।

 

মানি ডট কম অবলম্বনে

মেহেদী হাসান সবুজ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন