সুয়েজ খালই প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মিলন সবচেয়ে সহজ করে দিয়েছে ১৫০ বছর আগে; ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয় লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের সংযোজক খাল। পূর্ব ও পশ্চিমগামী জাহাজকে আগে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে আসা-যাওয়া করতে হতো। সুয়েজ খাল পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব কতটা কমিয়েছে, নিচের তথ্য তার প্রমাণ দেবে:
১. পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী সৌদি আরবের বন্দর রাস তানুরা থেকে নিউইয়র্ক বন্দরে যেতে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ১৭ হাজার ৭৯৪ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিতে হতো। সুয়েজ খাল সরাসরি ৩ হাজার ৫১৩ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে, এখন অতিক্রম করতে হয় ৮ হাজার ২৮১ নটিক্যাল মাইল; ৩০ শতাংশ পথ কমে গেছে।
২. একই বন্দর থেকে ডোমিনিকান রিপাবলিকের কনস্ট্যানজা বন্দরে পৌঁছতে ১২ হাজার ৯৪ নটিক্যাল মাইল জাহাজ চালাতে হতো। সুয়েজ খাল খুলে দেয়ার পর ৭ হাজার ৯৫০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব কমে গেছে। এখন যেতে হয় মাত্র ৪ হাজার ১৪৪ নটিক্যাল মাইল; পথের দূরত্ব কমেছে ৬৬ শতাংশ।
৩. ফ্রান্সের লাভেরা বন্দরের দূরত্ব কমেছে ৬ হাজার ৯৯ নটিক্যাল মাইল, হ্রাসের হার ৫৭ শতাংশ।
৪. জার্মানির রটেরড্যাম পৌঁছতে আগে ১১ হাজার ১৬৯ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে হতো, সুয়েজের কারণে তা নেমে এসেছে ৬ হাজার ৪৩৬ নটিক্যাল মাইলে। পথ কমার হার ৪২ শতাংশ।
৫. সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দর থেকে গ্রিসের পিরেআস বন্দরে যেতে ১১ হাজার ২০৭ নটিক্যাল মাইল জাহাজ চালাতে হতো, সুয়েজের কারণে অবিশ্বাস্যভাবে ৯ হাজার ৮৯১ নটিক্যাল মাইল কমে এখন দূরত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩১৬ নটিক্যাল মাইল। ৮৮ শতাংশ পথের দূরত্ব কমেছে।
৬. জেদ্দা থেকে রটেরড্যাম ১ হাজার ৭৯৭ থেকে ৩ হাজার ৯৯৭ নটিক্যাল মাইলে নেমে এসেছে, পথ কমেছে ৬ হাজার ৮০০ নটিক্যাল মাইল; হ্রাস পেয়েছে ৬৩ শতাংশ।
৭. সিঙ্গাপুর থেকে রটেরড্যাম বন্দরের দূরত্ব ছিল ১১ হাজার ৭৫৫ নটিক্যাল মাইল, ২৯ শতাংশ কমে গেছে সুয়েজের কারণে, এখন তা ৮ হাজার ২৮৮ নটিক্যাল মাইল।
৮. টোকিও থেকে রটেরড্যামের পথ কমেছে ২৯ শতাংশ; উত্তমাশা হয়ে দূরত্ব ১৪ হাজার ৫০৭, সুয়েজ দিয়ে ১১ হাজার ১৯২ নটিক্যাল মাইল।
কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে কেন সুয়েজ গুরুত্বপূর্ণ এবং পৃথিবীর জন্য অপরিহার্য, তা বোঝাতে চেষ্টা করা হয়েছে।
এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ অবাধ খাল, দিন-রাত সুয়েজের পথে জাহাজের আনাগোনা। এ পথে যেকোনো নৌপথের চেয়ে দুর্ঘটনা অনেক কম। রাডার নেটওয়ার্কভিত্তিক স্মার্ট ভিটিএমএস (ভেসেল ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) অবলম্বনের মাধ্যমে পুরো সুয়েজ খালে জাহাজ পর্যবেক্ষণ, মনিটরিং এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করা হয়ে থাকে। জাহাজের আকার ও মালপত্র পরিবহন ক্ষমতা বিবেচনায় খালের প্রস্থ ও গভীরতা বৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে।
সুয়েজের পর বিখ্যাত খাল পানামা। ৫০ মাইল দীর্ঘ পানামা খাল প্রশান্ত ও