২৯ অক্টোবর সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা উত্তেজনার মধ্যেই বোর্ডের পক্ষ থেকে অন্য রকম একটি সিদ্ধান্তের কথা জানা গিয়েছিল। কলকাতায় গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে রাজি বাংলাদেশ। মূলত বিসিসিআইয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই কলকাতা টেস্টকে গোলাপি রঙে রাঙানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটা’ খ্যাত ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। কেবল দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজনেই নিজের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেননি। ইডেন গার্ডেনের মুকুটে একের পর এক পালক লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘণ্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করবেন এ ম্যাচের। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট দলের বেশির ভাগ সদস্য। থাকবেন ভারতের নানা পর্যায়ের খ্যাতিমান ব্যক্তিরাও। এমনকি ‘রোমাঞ্চিত’ সৌরভ জানিয়েছেন, কলকাতা টেস্টের প্রথম চারদিনের টিকিট বিক্রি এরই মধ্যে শেষ। সব মিলিয়ে ইডেনে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টটি হতে যাচ্ছে স্মরণীয় এক আনন্দযজ্ঞ।
এ টেস্ট ম্যাচ সামনে রেখে পুরো কলকাতা রাঙানো হয়েছে গোলাপি রঙে। বিশেষ করে ইডেনের যেখানেই চোখ যাচ্ছে, সবই রাঙানো গোলাপি আভায়। এদিকে বর্তমান থেকে সাবেক সব ক্রিকেটারেরই চোখ এখন ইডেনের দিকে। গোলাপি বলের এ ম্যাচ ঘিরে উত্তাপও এখন তুঙ্গে। গোলাপি বলে টেস্ট ক্রিকেটের লড়াই কেমন হতে পারে, তা নিয়েও চলছে নানা ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী।
এরই মধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের জন্য ইডেন প্রস্তুত হচ্ছে সুইংয়ের ডালি নিয়ে। বলের পালিশ বিবেচনা করে উইকেটে রাখা হয়েছে ঘাসের ছোঁয়া, যা নিশ্চিতভাবেই সুবিধা দেবে পেসারদের। যদিও কিউরেটরের দাবি উইকেট থেকে সবাই সুবিধা পাবে। তবে প্রথম টেস্টে দুই পেসার নিয়ে খেলে আফসোস করা বাংলাদেশের স্কোয়াডে এবার হয়তো তিন পেসারের দেখা মিলবে। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে, দলে আসতে পারেন পেসার আল আমিন হোসেন কিংবা মুস্তাফিজুর রহমান। এদের মধ্যে অবশ্য আল আমিনের দলে আসার সম্ভাবনাই বেশি বলে শোনা যাচ্ছে।
তেমনটি হলে বাদ পড়তে পারেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ইন্দোরে সুযোগ পেয়েও খুব সুবিধা করতে পারেননি তিনি। তবে তাইজুল বাদ পড়লে ইন্দোরের পারফরম্যান্সের চেয়ে কলকাতার কন্ডিশনের দায়ই থাকবে বেশি, যা পেসারদের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। ইডেনের সবুজ গালিচায় অভিষেক অনেকটাই নিশ্চিত ছিল সাইফ হাসানের। কিন্তু চোটের কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে কলকাতা টেস্ট থেকে ছিটকে গেলেন এ ব্যাটসম্যান।
গোলাপি বলের ক্রিকেটের উত্তেজনা ছুঁয়ে যাচ্ছে ভারতের সাবেক ক্রিকেটারদেরও। তবে গোলাপি ও লাল বলের পরিসংখ্যানকে আলাদা করে উল্লেখের দাবি জানিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার। তিনি বলেন, ‘যখন দিবা-রাত্রির ক্রিকেট শুরু হয়েছিল, তখন অনেকেই ভেবেছিল এটা সফল হবে না। কিন্তু এখন অনেকেই এর অনুসারী। তাই এখন বলার কোনো কারণ নেই এটা সফল হবে না।’ ‘তবে একটা বিষয় আমি মনে করি, গোলাপি বলের পরিসংখ্যানকে লাল বলের পরিসংখ্যানের চেয়ে আলাদা রাখা উচিত’—যোগ করেন গাভাস্কার। এ সময় কোহলিদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন গাভাস্কার, ‘ভারতের এ দল অসাধারণ। তারা এমন কৌশল আবিষ্কার করেছে, যে উপায়ে আইসল্যান্ডের বরফে এবং সাহারার মরুভূমির বালিতেও জিতে আসতে পারে।’
বলা হচ্ছে, ইডেনের বাইশ গজ পেসারদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত। তবে কি স্পিনাররা ‘নন্দনকাননে’ ব্রাত্যই থেকে যাবেন? ভারতের সাবেক স্পিনার হরভজন সিং অবশ্য ভিন্ন কিছুই মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘গোলাপি বলের গতি বুঝে উঠতে পারাটা কঠিন। তবে রিস্ট স্পিনাররা ইডেনে বাড়তি সুবিধা পাবে।’ হরভজনের কথা যদি ভারতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা অনুধাবন করতে পারেন, তবে একাদশে আসতে পারেন কুলদীপ যাদব।
অন্যদিকে গোলাপি বলের টেস্টে আম্পায়ারদের জন্যও বাড়তি চ্যালেঞ্জ দেখছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার সাইমন টফেল। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না আম্পায়াররা বিশেষ কোনো লেন্স ব্যবহার করবেন কিনা। এটা তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে আমি বলব, আম্পায়াররা যেন খেলোয়াড়দের নেট অনুশীলনের সময়ও উপস্থিত থাকেন।’