মন্থর অর্থনীতিতে জর্জরিত ভারতের রিয়েল এস্টেট বাজারেও ধস দেখা দিয়েছে। তবে এ পরিস্থিতিতেও ধনী ভারতীয়দের বিদেশে বাড়ি বা আবাসনসম্পদ কেনায় আগ্রহী হতে দেখা গেছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর লাইভমিন্ট।
লন্ডনভিত্তিক রিয়েল এস্টেট কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্র্যাংকের ‘লন্ডন সুপার-প্রাইম সেলস মার্কেট ইনসাইট-উইন্টার ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে লন্ডনের প্রধান বাজারগুলোয় ভারতীয় আবাসন সম্পদ ক্রেতার সংখ্যা বছরওয়ারি ১১ শতাংশ বেড়েছে। সথবি’জ ইন্টারন্যাশনাল রিয়েলিটির সিইও ইন্ডিয়া অমিত গোয়াল জানান, লন্ডন বাদে বাড়ি কেনার জন্য ভারতীয়দের অন্যান্য জনপ্রিয় অঞ্চলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি ও আটলান্টা, কানাডার টরন্টো, অস্ট্রেলিয়ার মেলবর্ন ও সিডনিসহ আরো বহু এলাকা রয়েছে।
নাইট ফ্র্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডনে সম্প্রতি আবাসন মূল্য হ্রাস পাওয়ায় তা ক্রেতাদের আগ্রহী করে তুলেছে। ব্রেক্সিট গণভোট ও চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মধ্য লন্ডনে বাড়ির দামের উত্থান-পতন ও মুদ্রার মান হিসাবে নিলে প্রায় ২০ শতাংশ মূল্যছাড় ভারতীয় ক্রেতাদের লাভবান করেছে। ভারতীয়দের বিদেশে বাড়ি কিনতে যা আগ্রহী করছে।
লন্ডনের বাইরে জায়গা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও লাভজনক দিকটি বেছে নিয়েছেন ভারতীয়রা। ভারতের বাজারে বিনিয়োগের সঙ্গে তুলনা করলে দেখে গেছে, দেশের বাইরের বেশকিছু স্থানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধন ও ভাড়া উভয় ইল্ডই অনেক বেশি।
নাইট ফ্র্যাংক ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিশির বাইজাল বলেন, স্থানীয় অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়ায় ভারতীয়রা লন্ডনের মতো ম্যাচিউর বাজারগুলোয় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করছি, যেখনে উচ্চ রিটার্ন ও হোল্ডিংয়ের স্বল্পমেয়াদ রয়েছে।
পৃথক একটি প্রতিবেদন নাইট ফ্র্যাংক ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৯ অনুসারে, ২১ শতাংশ অতি উচ্চ নিট সম্পদশালী ভারতীয়র (এইচএনআই) মধ্যে দেশের বাইরে আবাসন সম্পদ কেনার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
ভারতীয়দের বিদেশের বাজারগুলোয় বিনিয়োগের আরো একটি কারণ, বাইরে বিনিয়োগ স্থানীয় অর্থনীতি ও বাজার ঝুঁকির মুখে তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। অক্টোবরে কার্ভি প্রাইভেট ওয়েলথ প্রকাশিত ইন্ডিয়ান ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৯ অনুসারে, মিচুয়াল ফান্ড, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড, প্রত্যক্ষ ইকুইটি, এমনকি স্থায়ী সম্পদের মাধ্যমে বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
গোয়াল বলেন, বিদেশে আবাসনসম্পদ কেনার ক্ষেত্রে আরো কিছু আকর্ষণও কাজ করে। দেখা গেছে, ভারতের তুলনায় সিংহভাগ বৈশ্বিক শহরগুলোয় রিয়েল এস্টেট-সংক্রান্ত বিধিবিধান অনেক স্বচ্ছ। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত বিকশিত বিধিবিধান, শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি এখানে জীবনমানও অনেক উন্নত।
এছাড়া বহু ভারতীয়ই বিদেশের শহরগুলোয় স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যেই বৈশ্বিক শহরগুলোয় আবাসন সম্পদ কিনতে চান। কার্ভির প্রতিবেদন অনুসারে, অভিবাসন স্কিমগুলোয় আগ্রহ বাড়তে দেখা গেছে। তাছাড়া বহু এইচএনআই তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিদেশে বসবাসের সুযোগ করে দিতে আন্তর্জাতিক লোকেশনগুলোয় স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। ভারতীয়দের রেমিট্যান্সের একটা বড় অংশ শিশুদের বিদেশে শিক্ষাগ্রহণ, পরিবারের সদস্যদের সহায়তা ও বিদেশে আবাসনসম্পদ কেনার পেছনে ব্যয় হয়।
এদিকে বহু দেশেই আবাসনসম্পদ ক্রয় বা বিনিয়োগের বিনিময়ে অভিবাসীদের দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসের অনুমোদন দিতে বা নাগরিকত্বও প্রদান করতে দেখা গেছে।