বিমান চলাচলে ব্যাঘাত, পর্যটক সংখ্যা হ্রাস, কর্মঘণ্টা কমা ও স্কুলে অনুপস্থিতি; যা রাজধানী নয়াদিল্লির বিষাক্ত বাতাস নিয়ে ভারতের লড়াইয়ের চিত্রে পরিণত হয়েছে। রাজধানী শহরের ভয়াবহ বায়ুদূষণ কেবল জনস্বাস্থ্যের ওপরই নয়, ক্রমাগত মন্থর প্রবৃদ্ধির কারণে হাবুডুবু খেতে থাকা ভারতের অর্থনীতিতেও বাড়তি চাপ তৈরি করছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বায়ুদূষণের কারণে ভারতের ক্ষতির পরিমাণ চার গুণ বেড়ে ৫৬ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে; যা জনস্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধি ও শ্রমশক্তি বিঘ্নিত করার মাধ্যমে অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্লেষক ও শিল্পসংশ্লিষ্ট লবি গ্রুপগুলো এখন দূষণকে অন্যান্য গোপন বা আড়ালে থাকা ব্যয়ের আওতায় ধরতে শুরু করেছে।
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে গ্রাহকদের পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান কন্ট্রোল রিস্কের নয়াদিল্লিভিত্তিক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক হেমন্ত শিবকুমার বলেন, এ দূষণ বৃহত্তর অর্থনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করবে। তিনি বলেন, যদি বায়ুদূষণ বছরের পর বছর বাড়তে থাকে ও এর প্রতিকার করা না হয়, এ পরিস্থিতি তাহলে বিনিয়োগকারীদের ভিন্ন বার্তা দেবে।
নয়াদিল্লির পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার নাড়া পোড়ানোর ধোঁয়া বাতাসে ভেসে আসায় চলতি মাসের শুরুতে রাজধানীটির বায়ুদূষণের মাত্রা রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছে। যার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার দূষণ কমাতে ৩০০টি ফিল্ড টিম মোতায়েন করে। কিন্তু এ পদক্ষেপ ও রাজ্য সরকারের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ সত্ত্বেও দূষণের মাত্রা এখনো উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে।
গত সপ্তাহে ‘চরম’ মাত্রায় অবস্থান করলেও সোমবার নয়াদিল্লির বায়ুমান সূচক বা একিউআই কিছুটা উন্নত হয়ে ‘পুওর’-এ নেমে আসে। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, সূচক ৪০০-এর ওপর ‘চরম’ মাত্রা ধরা হয়, যা সুস্থ ব্যক্তিদের জন্যও ক্ষতিকর। এছাড়া যারা এরই মধ্যে অসুস্থ, তাদের জন্য তা আরো ভয়াবহ ক্ষতিকর।
ভারতে ডোমিনিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিন ফ্রাংক হ্যান্স ড্যানেনবার্গ ক্যাসেলেলানোস বলেন, এটা আমাদের সবার ক্ষতি করছে। এ সমস্যার বড় অংশের সমাধান পৌর ও কেন্দ্রীয় সরকারকে করতে হবে।
শিল্প সংঘ অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দূষণের কারণে মেধাবীরা কাজের জন্য রাজধানী ছেড়ে ভারতের অন্যান্য শহর বা বিদেশে চলে যেতে বাধ্য হবে।
উল্লেখ্য, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ছয় বছরের সর্বনিম্নে পৌঁছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে সংকটে থাকা মোদি সরকারের জন্য আরো একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে বায়ুদূষণ।
লন্ডনভিত্তিক স্টার্লিং গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী ও ওয়ার্ল্ড উই ওয়ান্টের প্রতিষ্ঠাতা নাতাশা মুধার বলেন, দিল্লির চলমান দূষণ সংকট বেশকিছু অর্থনৈতিক ক্ষতির সঙ্গে সংযুক্ত। শহরটির নিয়োগকর্তাদের পক্ষে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে, যারা এ ভয়াবহ দূষণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন।
