ব্রিটেনের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে ক্রমবর্ধমান নৈশ অর্থনীতি। নৈশ অর্থনীতিকে নিজেদের পঞ্চম বৃহত্তম শিল্প বলে উল্লেখ করেছে দেশটির ‘নাইট টাইম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’। দেশটির মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮ শতাংশ হয় এ খাতে। অন্যদিকে ব্রিটেনের বার্ষিক রাজস্বের ৬ হাজার ৬০০ কোটি পাউন্ডও আসে এ খাত থেকে।
২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র সাদেক খান দেশটির বিখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপক ও পারফরমার অ্যামি লামকে লন্ডনের ‘নাইট জার’ নিয়োগ দেন। স্থানীয় সময় রাত ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত লন্ডনের রাতের অর্থনীতিসংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব পালন করতে হয় লামকে। প্রসঙ্গত, লামই লন্ডনের প্রথম ‘নাইট জার’।
নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে জনপ্রিয় এ কমেডিয়ান বলেন, লন্ডনে কর্মরত ১৬ লাখ মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে চোখ রাখাই আমাদের দায়িত্ব। তবে প্রতি রাতে লন্ডনে কর্মরত জাতীয় স্বাস্থ্য খাতের ১ লাখ ৯০ হাজার কর্মীর তত্ত্বাবধানই আমার প্রধান দায়িত্ব। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে প্রতি রাতে সেখানে পুরো বিশ্বের দেড় লাখ মানুষ কাজ করে বলেও জানান তিনি।
লাম বলেন, লন্ডন শহরে রাতের বার, পানশালা, ক্লাব ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় যুগ যুগ ধরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কাজ করে আসছে। ২০১৬ সালের পর থেকে আমাদের দিবা অর্থনীতি ২ শতাংশ বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে একই সময়ে নৈশ অর্থনীতি বাড়ছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
এদিকে লামের নেতৃত্বাধীন একটি দল বিশ্বের রাজধানীগুলোর নৈশ অর্থনীতি নিয়ে একটি নিবিড় গবেষণা পরিচালনা করেছে। প্রতিবেদনটিতে নিজেদের নৈশ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে সুপারিশ করা হয়েছে। নৈশ অর্থনীতি নিয়ে তিনি বলেন, লন্ডনের তৃণমূল পর্যায়ের নৈশ সংগীত ভেনু শুধু কোনো রকমে বেঁচেবর্তে থাকবে না, বরং আগামীতে সেগুলো আরো জমজমাট হয়ে উঠবে। জনপ্রিয় গায়ক অ্যাডেল ও এড শিরানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকের এসব বিখ্যাত গায়ক নৈশ সংগীত ভেনু থেকেই উঠে এসেছেন। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান বিশাল।
তবে নৈশ অর্থনীতির সফলতা নিয়ে এখনো কিছু বিতর্ক রয়ে গেছে। এছাড়া নৈশ অর্থনীতির কিছু সমস্যাও রয়েছে। এ সম্পর্কে মিডল্যান্ড অঞ্চলের দুটি সংবাদ সংস্থার মালিক টনি কাইথ বলেন, আমাদের নৈশ অর্থনীতিতে চুরি একটি বড় সমস্যা। অথচ তা নিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শহরের কেন্দ্রের খুচরা দোকানগুলোয় অপরাধীরা নির্বিবাদে ঘুরে বেড়ায়। পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
লন্ডনের পাশাপাশি নিউইয়র্কের নৈশ অর্থনীতিও বেশ বড়। ‘কখনো ঘুমায় না’ বলে পরিচিত এ শহরেও ২০১৮ সাল থেকে একজন নৈশ মেয়র নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ শহরের নৈশ মেয়র বা জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন আরিয়েল পলিতজ।
নৈশ অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিনোদনজগত থেকে আসা পলিতজ বলেন, ১০ বছর ধরে নিউইয়র্ক শহরে আমার নিজের একটি নৈশক্লাব রয়েছে। এখানে রাতে ব্যবসা করা এতটা সহজ নয়। বুঝতেই পারছেন, সহজ হলে সবাই তা করতে চাইত।
এদিকে নিউইয়র্কের নৈশ অর্থনীতি থেকে এরই মধ্যে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৫১০ কোটি ডলার (২ হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড)। অন্যদিকে স্থানীয় রাজস্বে এ খাত যোগ করেছে প্রায় ৭০ কোটি ডলার। সম্ভাবনাময় এ খাতকে সহায়তা করতে নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ (এনওয়াইপিডি) নতুন এক দর্শন হাতে নিয়েছে। ভোক্তাদের কলাকৌশলে নৈশ অর্থনীতিতে টেনে আনার পরিবর্তে আকর্ষণ (মেডিটেশন অ্যাপ্রোচ) করাই এ দর্শনের সার কথা। সূত্র: বিবিসি