পেঁয়াজ তথা কৃষিপণ্যের অস্বাভাবিক দামের স্থায়ী সমাধান আছে কি?

এম এম আকাশ

সম্প্রতি পেঁয়াজ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হয়ে গেল। আমরা দেখতে পেলাম চট্টগ্রামে এক দোকানদার নিজের দোকানে পেঁয়াজের মূল্যতালিকা টানিয়ে দিয়েছেন। সেই মূল্যতালিকায় হিসাবটা করা হয়েছে এক হালি পেঁয়াজ ২০ টাকা। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই, প্রায় ২০টি পেঁয়াজের ওজন যদি এক কেজি হয়, তাহলে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৪০০ টাকা হতে পারে। অবশ্য তখন দেখা যাচ্ছিল যে বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

৩০০ টাকা দেশে সময়ে অস্বাভাবিক দাম। কিন্তু এই অস্বাভাবিক দাম কেন হলো? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আরেকটি প্রশ্ন হলো, দাম কি স্থায়ী হয়ে গেল নাকি কমবে? এই সূত্রে তৃতীয় আরেকটি প্রশ্ন আসে যে মূল্যবৃদ্ধির কারণ কী? কারণ যদি স্থায়ী হয়, তাহলে মূল্যবৃদ্ধিও স্থায়ী হয়ে যাবে। আমরা সব প্রশ্নেরই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। প্রথমে দেখব যে পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষীদের খরচের সঙ্গে এর দামের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা। অর্থাৎ খুচরা বাজারে দাম বাড়লে উৎপাদক চাষী সে বাড়তি দাম কতটুকু পান। যদি তা পান তাহলে দাম বাড়লে উৎপাদনও বাড়বে এবং চাহিদা সরবরাহের অমোঘ নিয়মে পেঁয়াজের দাম আবার কমবে।

অতীতে আমরা দীর্ঘকাল দেখেছি পেঁয়াজের দামের খুবই ওঠানামা হয়। যখন ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ বাজারে আসে, তখন দাম কমতে কমতে অনেক সময় কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকায় নামে। এমনকি চাষী যখন আর কোনো জায়গায় বিক্রি করতে পারেন না, তখন -১০ টাকায়ও পেঁয়াজ বিক্রি করেন এবং পেঁয়াজ মাঠে-ঘাটে ছড়িয়েও থাকে। রকমও কখনো কখনো আমরা দেখতে পেয়েছি। আর খুব হালকা মৌসুমে, যখন বছর শেষে পেঁয়াজ আর বেশি নেই বাজারে বা খুব কম আছে, পেঁয়াজের উৎপাদন আর হচ্ছে না, পুরনো উৎপাদনও বিক্রি হয়ে গেছে, আরো কিছুদিন পরে নতুন উৎপাদন হবে, সেই চূড়ান্ত লগ্নে পেঁয়াজের দাম বেড়ে অতীতে আমরা দেখেছি যে ১৫০ টাকা পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। তার মানে ২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করতে আমরা দেখেছি, এটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমরা সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়বে এটি এবারো আশা করেছিলাম, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বরে ৮০-১০০ টাকা, সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা হবে এমনটিই ছিল আশঙ্কা। এর বেশি হওয়ার কথা নয়। অন্য সব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই এই ওঠানামার বিষয়টি দেখা যায়। লক্ষ করা যায়, ভর মৌসুমে কৃষিপণ্যের দাম থাকে কম এবং হালকা মৌসুমে এর দাম থাকে বেশি। এটি বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কারণে উৎপাদক ভোক্তা পর্যায়ে দামের মধ্যে বিরাট ব্যবধান দেখা যায়। সবসময়ই ব্যবধান পরিবহন ব্যয় দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ কৃষিপণ্যের বাজারটা অনেক স্পেকুলেটিভ মধ্যস্বত্বভোগীর হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত ভোক্তার কাছে যখন আসে, তখন মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফার হারের ওপর নির্ভর করে চূড়ান্ত দাম। সুতরাং দাম বেশি হলেই যে তার সুফল কৃষক পাচ্ছেন, একথা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। একটু দাম বেশি হলেও ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের পণ্য ধরে রাখার ক্ষমতা কম, তারা কম দামই পান, সেজন্য উৎপাদন আর বৃদ্ধি পায় না। যার জন্য দাম কমবে যুক্তিও সবসময় ঠিক থাকে না। সে কারণে কৃষিপণ্যের বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে। নিয়ন্ত্রণ এজন্য জরুরি, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারেন। দামের ওঠানামাও কমে আসে। খোদ উৎপাদক চাষীও বেশি দাম পান অথচ ভোক্তাকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন