নবম ও দশম শ্রেণীতে অনুপস্থিত থাকে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী

শ্রেণীকক্ষবিমুখতা রোধ ও বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় জোর দেয়া হোক

সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। আমরা প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্য অর্জন করতে পারলেও এদের একটা বড় অংশ মাধ্যমিক পর্যায় পেরোতে পারছে না। এসএসসি বা সমমানের শিক্ষা অর্জন করার আগেই তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটছে। পাশাপাশি আরেকটি বিষয় আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে তা হলো, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নবম দশম শ্রেণীতে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছে। সন্দেহ নেই, মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার মূল কারণ সামাজিক অর্থনৈতিক। মাধ্যমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ মেয়ে, যারা বাল্যবিবাহ সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে শিক্ষা চালিয়ে নিতে পারছে না। আর ছেলেরা যোগ দিচ্ছে কাজে। কারণ পড়ালেখার চেয়ে কাজের মাধ্যমে আয় করাই পরিবারের কাছে লাভজনক বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে চরাঞ্চল, হাওড় পাহাড়ি এলাকার চিত্র খুবই উদ্বেগজনক। দুর্গম এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেকেই লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজে যোগ দিচ্ছে। প্রাথমিকে উপবৃত্তি দুপুরে খাবার দেয়ার কারণে সবাই ওখানে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে এটা চালু না থাকার কারণে অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি শৃঙ্খলার দিক থেকেও চিন্তার বিষয়। যারা পাঠগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে, তারা কি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে? কেন শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকছে, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যদি এর কারণ হয় বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে না, তবে সেটি দূর করা জরুরি। এছাড়া শিক্ষকস্বল্পতা, মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব, বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রভৃতি বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে। শিক্ষকদের অনিয়মিত পাঠদানও শিক্ষার্থী আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। অনেক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসও নেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণেও শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যেতে পারে। শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতির বিষয়টি আগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করা হতো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিষয়টি তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণ বিবিধ। প্রথমত, দুইপক্ষই অর্থাৎ শিক্ষক শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় পরিবার এজন্য দায়ী। এরপর বলা যায় শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠদান পদ্ধতি। মাধ্যমিক শিক্ষায় যতটুকু উন্নয়ন প্রয়োজন ছিল, ততটা করা সম্ভব হয়নি। দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এসব বিদ্যালয় আর্থিক সংকটের কারণে পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারে না। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়গুলোকে নানা সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে গত কয়েক বছরে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তবে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি শূন্যপদে নিয়োগ না দেয়ায় শিক্ষার্থীর অনুপাতে বাড়ছে না শিক্ষক সংখ্যা। স্বীকার করতেই হবে বই, লেখাপড়া শ্রেণীকক্ষবিমুখ হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা আজকাল পরীক্ষায় অনেক ভালো ফল করছে। অবশ্য নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। আমরা চাই সর্বস্তরেই শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক। ধাপে ধাপে অর্জন করা সার্টিফিকেটগুলো কোনোক্রমেই যাতে শিক্ষার্থী অথবা তার পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে

");

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন