শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
হয়েছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। তার
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই পরাজয় স্বীকার
করে নিয়েছেন। গোতাবায়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই এবং
গৃহযুদ্ধকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। খবর দ্য গার্ডিয়ান।
সিংহলিজ-বুড্ডিস্ট
ন্যাশনালিস্ট পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। গত শনিবার
অনুষ্ঠিত ভোটের ফলাফল বলছে,
তিনি বেশ সহজ জয় পেয়েছেন। ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে
দেখা যাচ্ছে, সিংহলি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় রাজাপাকসে স্পষ্ট ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন।
অন্যদিকে তামিল অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেমাদাসা বেশি ভোট
পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ তার শপথ নেয়ার
কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোতাবায়ার মুখপাত্র কহেলিয়া রম্বুকওয়েলার। গতকাল বার্তা
সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন,
গোতাবায়া আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন।
আগামীকালই (আজ) শপথ নেবেন তিনি।
চলতি বছর ইস্টারের দিন শ্রীলংকায়
ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা গোতাবায়ার বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন
বিশ্লেষকরা। ওই ঘটনায় ২৫৯ জন প্রাণ হারান। এতে শ্রীলংকার পর্যটন শিল্প ও বিনিয়োগে
স্থবিরতা নেমে আসে। নির্বাচনী প্রচারণায় বারবারই এ প্রসঙ্গ টেনে মানুষকে পূর্ণ
নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।
শ্রীলংকার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া সেনাবাহিনীতেও দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এলটিটিইর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসানও তার হাত ধরেই।
সংখ্যালঘু মুসলিম ও তামিলদের সঙ্গে
সম্পর্ক শীতল হলেও সংখ্যাগুরু সিংহলিদের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
বৌদ্ধদেরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোয়
গোতাবায়াকে ‘চীনপন্থী’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে,
তিনি শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
হওয়ায় ভারত অস্বস্তিতে পড়েছে। কারণ চীনের সঙ্গে বরাবর সেতু হিসেবে কাজ করেছে
রাজাপাকসে পরিবার। আগামী বছরের শুরুতে শ্রীলংকায় সংসদীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনের
মাধ্যমে মাহিন্দা রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে ফেরার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া
যাচ্ছে না।
তবে এরই মধ্যে গোতাবায়াকে শুভেচ্ছা
জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটারে মোদি শুভেচ্ছা জানিয়ে
লিখেছেন, আমাদের দুই দেশ ও দেশের নাগরিকদের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি
এবং গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তার জন্য আপনার সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করতে অপেক্ষায়
রয়েছি। জবাবে গোতাবায়া লিখেছেন,
ইতিহাস ও বিশ্বাসের নিরিখে আমাদের দুটি দেশ একই
সুতোয় বাঁধা। আমাদের বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হবে আশা করি। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার
অপেক্ষা করছি।
উল্লেখ্য, শ্রীলংকার
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট ৩৫ জন প্রার্থী ছিলেন। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর
এটি ছিল দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
ইস্টার সানডের হামলার পর সমালোচনার
মুখে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট
মাইথ্রিপালা সিরিসেনা।
১০ বছর আগে গোতাবায়া রাজাপাকসের ভাই
মাহিন্দা রাজাপাকসে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। মাহিন্দা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর
থেকে গোতাবায়া রাজাপাকসে তাদের দল পিপলস ফ্রন্ট পার্টির প্রধান হিসেবে আছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি শক্তিশালী নেতৃত্বের
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।