সড়ক আইন সংশোধনের দাবি

আন্দোলনের পথে পরিবহন শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ কার্যকর হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। প্রথম দুই সপ্তাহ সচেতনতা তৈরির ওপর বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আইনটির প্রয়োগ শিথিল ছিল। গতকাল থেকে সড়ক আইন প্রয়োগের কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আইনটি কার্যকরের পর থেকেই বিভিন্ন ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এবার তারা হাঁটছেন আন্দোলন-ধর্মঘটের পথে। গতকাল যশোর থেকে দেশের ১৮টি রুটে ধর্মঘট শুরু করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এর আগে গত শনিবার সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে আধাবেলা ধর্মঘট পালন করেন। একই দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে কুষ্টিয়ায়ও।

এখন পর্যন্ত ধর্মঘটগুলো হচ্ছে বিক্ষিপ্তভাবে। কেন্দ্রীয়ভাবে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি না থাকলেও সড়ক আইনের একাধিক ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে তারা কঠোর অবস্থানে যাওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নতুন সড়ক আইনে দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে দায়ী চালককে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জেল বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর যদি দুর্ঘটনা চালকের ইচ্ছাকৃতভাবে হয়, তাহলে তার বিচার হবে ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারায়। এ ধারায় দোষী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি এ ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য। শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

যশোরে গতকাল থেকে সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। বন্ধ করে দিয়েছেন যশোর থেকে দেশের ১৮টি রুটের বাস চলাচল। ধর্মঘট প্রসঙ্গে এ আন্দোলনের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদের ঘাতক বলা হচ্ছে। তাদের জন্য এমন আইন করা হয়েছে, যা সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শুধু তা-ই নয়, নতুন সড়ক আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে, যা সংশোধন জরুরি।

পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিকরা মূলত ক্ষুব্ধ দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও বিভিন্ন ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জরিমানা বৃদ্ধি নিয়ে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর সর্বোচ্চ জরিমানা করা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে রয়েছে সর্বোচ্চ ছয় মাসের পর্যন্ত জেলের খড়গ। একইভাবে বাড়ানো হয়েছে অবৈধ পার্কিং, অতিরিক্ত গতি, অতিরিক্ত ওজনসহ অন্যান্য শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণও। পরিবহন শ্রমিকরা এসব শাস্তি কমিয়ে আনার দাবি করছেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক আইন সংশোধনের দাবিতে বিক্ষিপ্তভাবে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট করলেও এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে না বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে আমাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে ২১ ও ২২ নভেম্বর দুদিনব্যাপী আমাদের একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সেই বৈঠকে এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরা হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চলমান ধর্মঘটের সঙ্গে ফেডারেশনের কোনো সম্পর্ক বা সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে গতকাল নতুন সড়ক আইনটি ২০০৯ সালের মোবাইল কোর্ট অ্যাক্টে তফসিলভুক্ত হয়েছে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান। তিনি জানান, তফসিলভুক্ত হওয়ায় এখন বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন কার্যকর করতে পারবে। আইনের বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে। যতদিন পর্যন্ত বিধি প্রণয়ন না হবে, ততদিন পুরনো আইনের বিধি দিয়েই বিআরটিএ কাজ করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন