ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টি ও
ঝড়ো হাওয়ায় বাগেরহাটে মাছের ঘের ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার চিংড়িসহ অন্য
মাছের ৭ হাজার ২৩২টি ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ১ হাজার ৩০০
হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়। সব মিলে ক্ষতি
হয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। এছাড়া সুন্দরবনের গাছপালা ও বন বিভাগের অবকাঠামোগত
ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপকূলীয়
জেলা বাগেরহাটে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম-বেশি ক্ষতির শিকার হন চিংড়ি ও
মাছচাষীরা। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির তোড়ে
জেলার ৭৮ হাজার ৭০৯টি ঘেরের মধ্যে ৭ হাজার ২৩২টি ভেসে গেছে। এতে ঘের মালিকদের
ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ফলে চলতি অর্থবছর জেলায় ৩২ হাজার টন বাগদা ও গলদা
উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের
সুন্দরঘোনা গ্রামের শেখ সেলিম বলেন,
তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে
ঘের করেন। এতে চাষ করেছিলেন বাগদা,
গলদা ও সাদা মাছ। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের পর অবিরাম
বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ঘের তলিয়ে সব মাছ বের হয়ে গেছে।
জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির
মহিদুল ইসলাম সুমন অভিযোগ বলেন,
প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন
এখানকার চিংড়িচাষীরা। এ অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হলে ক্ষতিগ্রস্তদের
প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।
জেলা মত্স্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. খালেদ
কনক বলেন, চিংড়ি রফতানিতে বাগেরহাটের ঘের মালিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানির চাপে জেলার ৭ হাজার ২৩২টি ঘের ভেসে
গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে বুলবুলের আঘাতে জেলায় ৩ হাজার
৭০০ হেক্টরের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির শীতকালীন আগাম সবজি নষ্ট হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে টমেটো,
ফুলকপি,
বাঁধাকপি,
মরিচ,
পালংশাক,
লাউসহ বিভিন্ন সবজি। বিশেষ করে চিতলমারী, কচুয়া, সদর
ও মোল্লাহাটে এ ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
কৃষকরা বলেন, রাত-দিন কষ্ট করে
সবজি চাষ করেছিলেন। সবজিগুলো প্রায় বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেছিল, কিন্তু
তার আগেই সব নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা দাবি
করছেন তারা।
কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান এসএম নাছির উদ্দিন বলেন,
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে আমার এলাকার কৃষকের
সবজি ক্ষেতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সহায়তা ছাড়া কৃষকদের পক্ষে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা
সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তরের উপপরিচালক রঘুনাথ কর বলেন,
বুলবুলের প্রভাবে জেলায় ২২ হাজার ৯০০ কৃষকের ৩
কোটি ৭৭ লাখ টাকার সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সার ও
বীজসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।
এদিকে বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের সাড়ে
চার হাজার গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতির শিকার হয়েছে বন বিভাগের
বেশকিছু অবকাঠামো। সব মিলিয়ে বুলবুলের প্রভাবে সুন্দরবনে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৩
লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগীয়
বন কর্মকর্তরা।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয়
কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন,
বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের এ অংশে ৪ হাজার ২টি
গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মূল্য ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা। এছাড়া অবকাঠামোগত
ক্ষতি হয়েছে ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার।
তিনি আরো জানান, বুলবুলের
আঘাতে সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুষ্পকাঠি ফরেস্ট স্টেশনের ঘর, কদমতলার
এফজি ব্যারাক ও রান্নাঘর, কাঠেশ্বর অফিসের ট্রলার,
কোবাদক স্টেশনের কাঠের ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জেটি, ব্যারাক, চুনকুড়ি
স্টেশনের সোলার প্যানেল, দোবেকি টহল ফাঁড়ির ৪০ ফুট দীর্ঘ পন্টুন, নলিয়ান রেঞ্জ অফিসে যাতায়াতের রাস্তা
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন
কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন,
পূর্ব সুন্দরবনে যাচাই-বাছাই শেষে ৮
লাখ ৬২ হাজার টাকার ৫৮৭টি গাছপালার ক্ষতির আলামত পাওয়া গেছে। তবে বন্যপ্রাণীর কোনো
ধরনের ক্ষতির আলামত পাওয়া যায়নি। এছাড়া পূর্ব বন বিভাগের অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ
৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৬টি আবাসিক ভবন, ১৭টি অনাবাসিক, ১০টি
জেটি, ৩টি নৌযান ও ১৯টি অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।