‘ব্লু-ইকোনমি’র কর্মযজ্ঞ জোরদার করায় ব্যর্থতার দায় কার?

ড. মইনুল ইসলাম

প্রতিবেশী মিয়ানমার ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে কয়েক দশকের বিরোধ অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন অব দ্য সি (ইটলস) এবং দ্য হ্যাগের আন্তর্জাতিক আদালত থেকে ২০১২ ২০১৩ সালে বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আমরা অনেকেই জানি না যে, বিরোধে বাংলাদেশকে আইনি লড়াইয়ে হারানোর জন্য ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগসাজশে লিপ্ত হয়েছিল। ইটলসে মিয়ানমারের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর দায়িত্ব নিয়েছিল ভারত, খ্যাতিমান সব ভারতীয় আইনবিদ মিয়ানমারের মামলা পরিচালনা করেছেন। সত্ত্বেও মিয়ানমার ইটলসের ঐতিহাসিক রায় তাদের পক্ষে নিতে পারেনি। পরাজয়ের পর ভারত চাণক্য চাল চেলেছিল বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে সমুদ্রসীমার ভাগবাটোয়ারা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের -সংক্রান্ত নীতিনির্ধারকরা ভারতের কূটচালের ফাঁদে ধরা না দিয়ে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আদালতে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেখানে ভারতের বিখ্যাত আইনবিদের যুক্তি অগ্রাহ্য করে আদালত বাংলাদেশকে কোণঠাসা করার ভারতীয় অপপ্রয়াসকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন (ভারতীয় যুক্তি মানলে বাংলাদেশসি-লকডহয়ে যেত, যার মানে কন্টিনেন্টাল শেলফ অতিক্রম করে ভারত মহাসাগরের সীমানায় প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকে ভারত মিয়ানমারের করুণার ওপর নির্ভরশীল হতে হতো) বাংলাদেশ মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয়ের জন্য ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে চিরদিন কৃতিত্ব দিয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিরঙ্কুশ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে। এই ঐতিহাসিক বিজয় শুধু বিশাল সমুদ্রসীমার ওপরঅর্থনৈতিক কর্তৃত্বস্থাপনের কৃতিত্ব নয়, বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগরের একটি বিশাল এলাকার সমুদ্রসম্পদ আহরণের স্বর্ণ সুযোগ উপহার দিয়েছে সমুদ্র বিজয়। বাংলাদেশের স্থলভাগের আয়তন যেখানে মাত্র লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের সামান্য বেশি, সেখানে লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অর্জন যে আমাদের কত বড় সৌভাগ্য, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি কি? আরো দুঃখজনক হলো, বিজয় অর্জনের ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও যথাযথ অগ্রাধিকার দিয়ে আজো এই বিশাল সমুদ্রসীমা থেকে সম্পদ আহরণ জোরদার

করা যায়নি।

এটা স্বীকার করতে হবে যেব্লু-ইকোনমিসম্পর্কে কয়েকটি সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে, সম্প্রতি তিনদিনের একটি আন্তর্জাতিক ডায়ালগও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ছয় বছরেও আমাদের প্রস্তুতি এখনো শেষ হলো না কেন? এখনো পত্রপত্রিকায় প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় হানা দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড ভারতের ফিশিং ট্রলার। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমায় বিপুল গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে, যা চীনের কাছে পাইপলাইনে রফতানি করছে মিয়ানমার। অথচ মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের সাত বছর অতিক্রান্ত হলেও ওই অঞ্চলের বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখনো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরুই করা গেল না! ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ব্লু-ইকোনমি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানি এই বিলম্বের প্রধান কারণ! সমুদ্র ব্লকগুলোয় তেল-গ্যাস আহরণে জন্য বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানিকেপ্রডাকশান শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট’-এর ভিত্তিতে ব্লকের ইজারা প্রদানের বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও নাকি আটকে আছে বিভিন্ন শক্তিধর দেশের টানাপড়েনের কারণে। কিন্তু এমন বিলম্ব যে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি ঘটিয়ে চলেছে, তার দায় কে নেবে? নিচের বিষয়গুলো একটু গভীরভাবে বিবেচনা করুন:

বাংলাদেশ মিয়ানমারের সমুদ্রসীমার অদূরে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রে বেশ কয়েক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন